মণিরামপুর( যশোর)প্রতিনিধি।।নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া নিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর অভিযোগকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন যশোরের মণিরামপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আলহাজ্জ্ব অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান।
বুধবার বিকালে মণিরামপুর প্রেসক্লাবের হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও অ্যাড. শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও নৌকার প্রচার কর্মীদের প্রতি অভিযোগ তুলে জানান, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন ধানের শীষের প্রচারণাকালে তাদের মারপিট, পোষ্টার ছিড়ে ফেলাসহ বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে।
বিভিন্ন জায়গায় তাদের কর্মীদের প্রচারণা চালাতে বাধা দেওয়াসহ লাঞ্চিত করার অভিযোগ তোলেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন। তবে পরিস্থিতি যাই হোক শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করে সূষ্ঠু ও নিরপক্ষ ভোট অনুষ্ঠানে প্রশাসনকে আরও আন্তরিকতার সাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপির মেয়র প্রাার্থীর অভিযোগকে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রমূলক।
ভিত্তিহীন ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে বিকৃত রুচি এবং বিএনপির নেতা হিসেবে তাদের স্বভাবসূলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ৩০ জানুয়ারীর নির্বাচন অবাধ, সূষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি-না সেটি নিয়ে আগাম প্রশ্নবোধক বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি পোষ্টার ছেড়া নিয়ে আমার নাম উল্লেখ করে একটি বক্তব্য দিয়েছেন-তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এটি তার কল্প কাহিনী। আমার পক্ষ থেকে নির্বাচন আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বা মারপিট কিংবা জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয়নি।
মূলত একটি ইস্যু সৃষ্টি এবং নির্বাচনি পরিবেশকে উত্তপ্ত করার অপচেষ্টায় এরূপ মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এটি তাদের রাজনৈতিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।এছাড়া প্রচার মাইক বন্ধ করা বা পেনড্রাইভ বন্ধ করে প্রচার মাইক ও ইজিবাইক ভাংচুরের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার পুত্র কাজী মাহমুদ পারভেজ শুভ ও উপজেলা চাত্রলীগের যুগ্,আহবায়ক ফজলুর রহমানের নামে মিথ্যা বক্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রতীক বরাদ্ধের পর রাতে বিএনপির প্রার্থীর নেতৃত্বে নির্বাচনী এলঅকায় ধানের শীষের মিছিল বের করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
বিগত সময়ে বিএনপি থেকে নির্বাচিত মেয়র শহীদ ইকবাল হোসেন পৌরসভার দায়িত্ব পালনকালে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে নৌকা প্রতীকের প্রতিদ্বন্ধিতাকারী এই প্রার্থী বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী নিজস্ব ভাগ্য উন্নয়নে পৌরসভার অর্থ ও সম্পদ ব্যবহার করেছেন। তাদের বিগত দিনের আচরণে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়েছে। ফলে প্রচারণাকালে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করছেন। এ কারণে তারা ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামীলীগ সূষ্ঠু নির্বাচন চায়। বিএনপির কাছ থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভোটের দিন বিএনপির কর্মীরা নিজেরাই ভোটকেন্দ্রগুলোতে সংঘাত সৃষ্টি করে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপানোর পাঁয়তারা করছেন। এ কারণে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণায় না গিয়ে শুধু মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে।
বিএনপি প্রার্থীর বিভিন্ন সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ দলীয় এই মেয়র প্রার্থী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের কাজ করে এবং জনগণের রায়ের প্রতি আস্থাশীল। আগামী ৩০ জানুয়ারি সূষ্ঠুভাবে ভোট প্রদানের প্রত্যয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের দোয়া ও সমর্থনে সূষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নৌকা মার্কা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এই মেয়রপ্রার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি কৃষিবিদ আব্দুস সালাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমাজাদ হোসেন লাভলু, জেলা যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, উপজেলা আওয়ামীলীগের তরুণনেতা অ্যাড. বশির আহমেদ খান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক আমজাদ হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তরুণ আওয়ামীলীগনেতা সন্দীপ ঘোষ, সাবেক ছাত্রনেতা নিয়ামত উল্লাহ, উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার, জেলা পরিষদ সদস্য রোখসানা পারভীন পান্না, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মনিরুজ্জামান মিল্টন, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি কামাল হোসেন, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক অরবিন্দু হাজরা, সাবেক ছাত্রলীগনেতা ইঞ্জি: আলমগীর হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মুরাদুজ্জামান মুরাদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জানুয়ারি মণিরামপুর পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে মোট তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান পৌর মেয়র আলহাজ্জ্ব অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান, বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র অ্যাড. শহীদ মোঃ ইকবাল হোসেন এবং এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীকে মাষ্টার মোঃ আবু তালেব পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
আমাদেরবাংলাদেশ.কম/রাফি
Leave a Reply