নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ‘জাতীয় সংলাপ’ করবে বলে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। আর এই সংলাপে জামায়াত ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
গণফোরামের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। এই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংলাপে বসছি আমরা।’
বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে এ সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
রব বলেন, ‘আন্দোলনে সব মানুষের অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথাও ভাবছে ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রক্রিয়াও চলছে।’
এর আগে বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির পক্ষ থেকে কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থতার কারণ জানালেও দলটির অন্য শীর্ষ নেতাদের কেউই কেন বৈঠকে উপস্থিত হননি তা স্পষ্ট নয়।
জামায়াতকে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রব বলেন, ‘জামায়াত অতীতেও আমাদের সঙ্গে ছিল না। এখনও নেই। জাতীয় সংলাপেও জামায়াতের থাকার প্রশ্নই আসে না।’
এছাড়া এই নির্বাচনে যেসব দল অংশ নিয়েছে তাদের সবাইকে ‘জাতীয় সংলাপে’ আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু।
রব বলেন, ‘আমরা আগামী ২৮ জানুয়ারি জাতীয় সংলাপ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। দেশের যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে সরকারি দল ছাড়া সবাই প্রতিবাদ করেছে যে দেশে কোনও নির্বাচন হয়নি। ভোট ডাকাতি হয়েছে। ২৮ তারিখের জন্য হল বুক করেছিলাম। তারিখ পরিবর্তন হতে পারে। সম্ভবত ৬ ফেব্রুয়ারি হতে পারে। আমাদের নেতা (ড. কামাল) চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। উনি ফিরে আসলে আমরা সম্ভবত ৬ ফেব্রুয়ারির দিকে জাতীয় সংলাপ করব। এরপর আমরা নাগরিক সংলাপ করব। এরপর আমরা নাগরিক কমিটি করব।’
তিনি বলেন, ‘সমাজের সকল শ্রেণি-পেশা-কর্মের মানুষ, সারা দেশের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য স্তরে স্তরে ধাপে ধাপে আন্দোলনের মধ্যদিয়ে জনগণ তাদের ভোটের অধিকার ফেরত পেতে পারে, গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পেতে পারে, মানবিক অধিকার ফেরত পেতে পারে, নাগরিক অধিকার ফেরত পেতে পারে তার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘অস্থির হয়ে, তাড়াহুড়া করে আমরা কোনও কর্মসূচি দিতে চাচ্ছি না। আবেগের বশবর্তী হয়ে যেকোনও কর্মসূচি দেয়ার বদলে চিন্তা-ভাবনা করে স্তুরে স্তরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের ভোটের গণতান্ত্রিক, মানবিক অধিকার ফেরাতে চাই।’
রব বলেন, ‘সূবর্ণচরের ঘটনা শুধুমাত্র একজন নারীর ওপর ধর্ষণ নয়, ১০ কোটি ভোটারকে ধর্ষণ করেছে। সারা পৃথিবীর মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কী হল বাংলাদেশে? আমরা সেই সংগ্রাম-আন্দোলনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যাব।’
বিএনপির কেউ বৈঠকে আসেনি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রব বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট ছিল, আছে, থাকবে। আজকের বৈঠকে একজন আসছেন। তিনি রাস্তায়। আমাদের প্রত্যেকেরই কাজ আছে। যার যার মামলা-টামলা করতে হবে। এজন্য ব্যস্ততার কারণে দেরি না করে চলে যাচ্ছি।’
এ সময় রবের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব অসুস্থ। সেজন্য তিনি আসতে পারেননি। ড. মঈন খান ও গয়েশ্ব চন্দ্র রায়ের আসার কথা ছিল। তারাও ঝামেলার কারণে আসতে পারেননি। ঐক্যফ্রন্ট যেখানে ছিল, এখনও একই জায়গায় আছে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আপনারা গত কয়েক মাস ধরে ঐক্যফ্রন্টকে যেভাবে সহযোগিতা করে আসছেন, তার অর্থ বাংলাদেশের জনগণকেই আপনারা সহযোগিতা করছেন। বাংলাদেশে গত ৩০ তারিখে যে ঘটনা ঘটে গেছে পুরো জাতি তাতে স্তব্ধ হয়ে আছে। সবাই জিজ্ঞাসা করে কি হল? কিছু বলেন না কেন? কেউ কোনও কথা বলে না। আমি চৌদ্দ দিন পর একজন ভোটার পেয়েছি। কমলা কিনতে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করলাম তুমি ভোট দিয়েছো? বলল- দিয়েছি। বললাম বাড়ি কোথায়? উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে আছে। আমি বললাম বুঝতে পেরেছি। ১৪ দিন পর বাংলাদেশে আমার নির্বাচনী এলাকা রামগতি, লক্ষ্মীপুরের পরে একজন ভোটার পেয়েছি। সে বলেছে ভোট দিয়েছি। আর কেউ বলেনি ভোট দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের উলঙ্গ ভয়ংকর, জগণ্য ভোট ডাকাতি হয়েছে বলে আমি শুনিনি। দেখি নাই এমনকি পড়িওনি কোথাও। আমি মান্নাকে জিজ্ঞাসা করতে ছিলাম, তুমি কোথাও বই পুস্তকে পড়েছো? মান্না বলল-কোনো বই পুস্তকে পড়ি নাই। আমরা পৃথিবীর বহু দেশের স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট এক নায়কের ইতিহাস জানি। কিন্তু এ ধরণের ঘটনা পৃথিবীতে আর ঘটে নাই।’
রব বলেন, ‘নির্বাচনের শিডিউল ছিল ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু ভোট হয়ে গেছে ২৯ ডিসেম্বর। আপনারা বলেনতো কেউ কি চিন্তা করতে পেরেছেন? আমরা পারি নাই। আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেন ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনারা ফজরের নামাজ পড়ে ভোট দিতে যাবেন। কিন্তু আগের রাতেই এশার নামাজের পরপরই ভোট ডাকাতি করে ফেলেছে। কাটতে বলেছে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। কিন্তু কেটে ফেলেছে ১০১ ভাগ।’
স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে কী ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হল- এমন প্রশ্নের জবাবে আ স ম রব বলেন, ‘আমরা বসেছি। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব। আমাকে দু’জন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বলেছেন চাকরি ছেড়ে দেব। প্রশাসনিক কয়েকজন কর্মকর্তার নাম জানি তারাও বলেছেন চাকরি ছেড়ে দেবে। আত্মহত্যা করা নাকি মহাপাপ। সত্য কথা বলতে পারি না চাকরি করব কেন? আমি বললাম খাবে কি? বলে ভিক্ষা করব! তবু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালেও মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি। ২০১৮ সালে ভোট দিতে গিয়ে ভোট দিতে পারে নাই। মানুষের মনে ক্ষোভ আছে। বিক্ষোভ আছে। অসন্তোষ আছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করতে চায়। আমরা যাই করি দলীয় শক্তি দিয়ে, ঐক্যফ্রন্টের শক্তি দিয়ে কিছু করতে চাচ্ছি না। আমাদের অনেকেই এসে বলছে কর্মসূচি দেন। আমরা বৈঠকের পর বৈঠক করছি, কী ধরনের কর্মসূচি হলে জনগণ সঙ্গে থাকবে, আমরাও জনগণের সঙ্গে থাকতে পারব এসব নিয়ে। আমরা গণস্বাক্ষর অভিযানের কথা চিন্তা করেছি। আমরা চিন্তা করছি। আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা ট্রাইবুনালে মামলা করতে যাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন কথা শুনতে পাচ্ছি।’
রব বলেন, ‘ট্রাইবুনালে মামলা করার জন্য রিটার্নি, সহকারী রিটার্নিং, প্রিজাইডিং কর্মকর্তার তথ্য লাগে। আমি সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মামলার কথা জানি। তিন বছর মেয়াদের মধ্যে দুই বছর নয় মাসের মাথায় গিয়ে জাজমেন্ট দিয়েছে। আজকেও বিভিন্ন ভয় দেখানো হচ্ছে যে, আমাদের তথ্য ফরমাদি দেয়া হবে না। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আদালত হচ্ছে বিবেক ও জনগণের আদালত। আমরা ইনশাল্লাহ সেই জনগণের কাছে যাব।’
আজকের আলোচনায় মূল সিদ্ধান্ত কী হল- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, ‘২৮ জানুয়ারি আমাদের নাগরিক সংলাপের তারিখ পিছিয়ে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই যে নির্বাচনটা হয়েছে, আমরা মনে করি এতে জনগণ পরাজিত হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে জনপ্রতিরোধ করতে হবে।’
জামায়াত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘জামায়াত এখানে কোনও বড় ইস্যু নয়। আমাদের আন্দোলন এখন ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে। জামায়াতের সঙ্গে আমরা ছিলাম না, এখনও নেই। জামায়াতের বিষয়টা আমাদের আলোচ্য বিষয়ে খুব একটা প্রধান্য পাচ্ছে না।’
এ সময় রব বলেন, ‘এটা একটা পুরানো প্রশ্ন। আমরা তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে আমরা সরাসরি জীবন দিতে গিয়েছি। আমি, মন্টু, মান্না। ‘৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেছে, তারপর আবার নতুন করে সে প্রশ্ন উঠে না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে রব, মন্টু, মান্নারা যেতে পারে না।’
ড. কামাল হোসেন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে কবে যাবেন- জানতে চাইলে মন্টু জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাবেন।
তিনি বলেন, ‘তাহাজ্জুতের নামাজের যে নির্বাচন, যা জাতিকে হতবাক করে দিয়েছে সেই নির্বাচনের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ; দেশে যারা একটি অবাদ সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুঁজে দেবে তাদের সঙ্গে আমাদের ঐক্য থাকবে।’
জামায়াতের প্রার্থীরা ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত জাতীয় সংলাপে থাকবে কিনা জানতে চাইলে মান্না বলেন, ‘না থাকবে না।’ মন্টুও মান্নার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টে কোনও জামায়াতের প্রার্থী ছিল না। এটা বারবার বলেছি, এখনও বলছি, ছিল ধানের শীষের প্রার্থী।’
বৈঠকে ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রাজু
হেড অফিস : প্রস্তাবিত (১ম তলা),৯৮, নয়াপল্টন,ঢাকা-১০০০
বানিজ্যিক এলাকা: বাইপাইল আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা।
মফস্বল কার্যালয়: মেইন রোড (২য় তলা),কেশবপুর,যশোর।
নিউজ-মেইল: dailyamaderbd24@gmail.com
নিউজ রুমঃ রাজু:- ০১৭১১-১৩৯৪২০
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম