এখানে যেমন আইন, লোক প্রশাসন, বাংলা, ইংরেজি সহ মোট ৩৩টি বিভাগ রয়েছে। তেমনি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে খোলা হয়েছে আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন অধ্যয়ন, মোট আটটি বিভাগ। এছাড়াও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে একটি ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে চারুকলা বিভাগের মাধ্যমে ৩৪ টি বিভাগে উন্নীত হয়েছে। যাতে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। ২০২১ সালের মধ্যে বিভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৯টি।
একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অনুষদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫টি থেকে ৮টি করা হয়েছে। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভেঙ্গে কলা অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভেঙ্গে বিজ্ঞান অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদ এবং বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে অনুষদ করা হয়েছে।
ইতোপূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত সেশনজট ইতিহাস থাকলেও বর্তমান প্রশাসন বিভাগগুলোর সেশনজটকে জাদুঘরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ ছাত্রীসহ ৩৬ বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আন্তর্জাতিক ৭টি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিস্বাক্ষরিত হয়েছে। শিক্ষা, প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কাজ ত্বরাণ্বিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময় ৮টা-২টা’র পরিবর্তে ৯টা-৪টা ৩০মিনিট করা হয়েছে।
শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘ভাইস চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল’ এ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ, অফিস ও হলসমূহের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনতে ক্যাম্পাসের প্রতিটি ভবনে স্বচ্ছ অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হয়েছে।
দীর্ঘ ১৬ বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি ৪র্থ সমাবর্তন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবর্তনে প্রায় ১০ হাজার ডিগ্রিধারীসহ ১৪ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে, যা দেশের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু আন্তবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশীপ-২০১৯-এ ইবির একজন কৃতি খেলোয়াড় সেরা এ্যাথলেট হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি লাভ করে ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেন।
এছাড়াও নেপালের কাঠমান্ডু ও পোখারাতে আগামী ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য সাউথ এশিয়ান গেমস-২০১৯-এ বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে মোট ৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ইবির ৬ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে টি.এস.সি.সি মিলনায়তনের নাম ‘বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন’ করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। এতে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ড. শামসুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয়ে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে পঠন-পাঠন ও গবেষণায় সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার এবং একুশে কর্ণার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান প্রশাসন। ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগাপ্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পাসে ৯টি দশতলা ভবন ও ১টি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণ, ১২টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ, গভীর নলকূপ স্থাপন, ২টি ৫০০ কেভি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, সোলার প্যানেল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন ২য় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের বি-ব্লক, শেখ রাসেল হলের এ-ব্লক, রবীন্দ্র-নজরুল কলাভবন, প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের জন্য নির্মিতব্য ৫তলা আবাসিক ভবনের ৩য় তলা পর্যন্ত, ৫০০ কেভি সাবস্টেশন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিতব্য ১০তলা আবাসিক ভবনের ৫তলা পর্যন্ত ১ম পর্যায়ের নির্মাণকাজ, অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, মেডিক্যাল সেন্টার ও গেস্ট হাউজের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণকাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের উর্দ্ধমুখী ও আনুভূমিক সম্প্রসারণ কাজ, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া বিজ্ঞান ভবনের ৩য়-৫ম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ কাজ এবং ৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলার সম্প্রসারণ কাজ এবং নিজস্ব ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (আইআইইআর) ভবন নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের দক্ষিণপার্শে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা এবং একেবারে পশ্চিম প্রান্তে লেক তৈরি করা হয়েছে।
পরিবহন সঙ্কট দূরীকরণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ৬টি এসি কোস্টার এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৫২ সীটের অত্যাধুনিক ২টি হিনো বাস যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ডেন্টাল ইউনিট চালু করা হয়েছে।
শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, গবেষণার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ, সকল অনুষদ হতে আন্তর্জাতিকমানের গবেষণা জার্নাল প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা, শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াদক্ষতা বৃদ্ধির নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণসহ মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। নানামুখী উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রশাসনের সুদক্ষ পরিচালনায় একটি আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যাপীঠ ও গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী উপ-উপাচার্য ড. শাহিনুর রহমান (দ্বিতীয় মেয়াদে) এবং কোষাধ্যক্ষ ড. সেলিম তোহা’র হাত ধরে ৩ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান প্রশাসন।