ওবাইদুল ইসলাম, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধার বিভিন্ন ফসলের মাঠে এখন সরিষা ফুলের হলুদের সমারহ। যত দুর চোখ যায় হলুদ আর হলুদ। শীতের কুয়াশা ভেদ করে হলুদ সরিষা ক্ষেত যেন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
আমন কাটার পর বোরো চাষ শুরুর আগ পর্যন্ত জমির পতিত সময়ের মধ্যে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করছেন চাষিরা। কম খরচে, অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন গাইবান্ধায় বাড়ছে সরিষার আবাদ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছেন, ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ে স্বচ্ছলতা পাবে কৃষকরা।
জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী পৌরসভা ব্লকের গেল বছর সরিষার আবাদ করা হয়েছিল ১৫৮ হেক্টর জমিতে কিন্তু এবছর তা বেড়ে হয়েছে ২৮৬ হেক্টর। শুধু এই ব্লকে নয় জেলার ২৪৯ টি ব্লকের প্রায় অধিকাংশ ব্লকেই বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষার আবাদ।
সরজমিনে গিয়ে পলাশবাড়ী ব্লকের সরিষা চাষী মিন্টু মিয়া সাথে কথা বললে তিনি জানান, আগে অধিকাংশ সময় আমন কাটার পর বোরো রোপনের পূর্ব পর্যন্ত এই সময়টা জমি পতিত পড়ে থাকতো । কিন্তু এবছর আমাদের এই ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শর্মিলা শারমিন আপা আমাদের পরামর্শ দেন সরিষা চাষ বেশ লাভজনক আমন বোরো আবাদ ঠিক রেখে সরিষার আবাদ পাওয়া যায় এবং সেই সাথে তিনি আমাদের সরিষার বীজ, সার এবং নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। তাই এবছর আমি সরিষার আবাদ করেছি, আবাদ খুব ভালো হয়েছে।
কথা হয় একি ব্লকের হাসান আলী সাথে তিনি বলেন, এবছর আবহাওয়া মোটামুটি ভাল হওয়া সরিষার আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ৬ থেকে ৭ মন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মন সরিষা বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২৭’শ থেকে ৩ হাজার টাকা, এতে তারা বেশ খুশি।
এ সময় শামীম মিয়া বলেন, সরিষার আবাদ খুব লাভজনক সরিষার কোন কিছুই ফেলে দিতে হয় না সবকিছুই কাজে লাগে। এটি শাক হিসেবে খাওয়া যায়, সরিষা থেকে তেল ও খোল হয়। সরিষা গাছের আগাছা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় এটি যে জমিতে চাষ করা হয় ওই জমির উর্বরতা বাড়ে। সরিষা চাষী সোভান বলেন, দিন দিন সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, সরিষার আবাদ করার ফলে আমাদের নিজেদের তেলের চাহিদা এখান থেকে পূরণ হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারের জন্য বাড়তি কিছু আয়ও হচ্ছে। আমাদের এই অঞ্চলের বি,এস শর্মিলা শারমিন আপাকে ধন্যবাদ তিনি আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। কখন জমির কি করতে হবে সব পরামর্শ তিনি দেয়। যখন ডাকি তখনি তাকে পাওয়া যায়। তার নিয়মিত পরামর্শের ফলে আমরা ভালো ভাবে জমির পরিচর্যা করতে পাছি এইজন্য আল্লাহর রহমতে আমরা ভালো ফলনও পেয়েছি।
পলাশবাড়ি পৌরসভা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শর্মিলা শারমিন জানান, সরিষা বীজ, সার প্রনোদনা সহায়তাসহ নিয়মিত তিনি তার ব্লকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন, লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এই এলাকায় বৃদ্ধি পাচ্ছে সরিষার আবাদ। এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৬ থেকে ৭ মন পর্যন্ত। যার এবছর বাজার মূল্য প্রায় ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, কৃষিবিদ খোরশেদ আলম জানান, এবছর গাইবান্ধা জেলায় কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ২২ হাজার কৃষককে সরিষার বীজ ও সার প্রনোদনা প্রদান করা হয়েছে। সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ ও প্রনোদনা প্রদানসহ বিভিন্ন ভাবে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে । ফলে দিন দিন এ জেলায় সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গেল বছরের তুলনায় এবছর জেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলায় এ বছর ১৭৫৭৪ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন হবে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন সরিষা।