আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্কঃ কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর এ ঘোষণা দেন তিনি। সোমবার রাজ্যসভায় এ সংক্রান্ত বিলও উত্থাপন করেছেন অমিত শাহ। এর মাধ্যমে সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মিরের সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করতে চাইছে ভারতের মোদি সরকার।
ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এ ৩৭০ ধারাকে। এটি তুলে দিলে বিশেষ সুবিধা হারাবেন অঞ্চলটির বাসিন্দারা।
কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর আর জম্মু অঞ্চলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রেটার কাশ্মীরের খবরে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খবর ছড়ানো বন্ধ রাখতে ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রতিরোধ এটা কাশ্মীরের একটি স্বাভাবিক কৌশল। ল্যান্ডফোনের যোগাযোগও কেটে দেয়া হয়েছে।
রবিবার রাত থেকে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহকে গৃহবন্দি করে রেখেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও নিজ বাড়িতে নজরদারির মধ্যে রয়েছেন সেখানকার আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ও পিপলস কনফারেন্স পার্টির চেয়ারম্যান সাজাদ লোন।
রবিবার কাশ্মিরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্পর্শকাতর এলাকায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানের সঙ্গে সহিংসতা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বহু স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্রাবাস খালি করে ফেলারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাশ্মির পুলিশের দাবি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিন রাজ্য সরকারের এক নির্দেশনায় বলা হয় যেকোনও ধরণের সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ থাকবে। তবে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে কারফিউ জারির কথা বলা হলেও তা জারি করা হয়নি বলে জানানো হয় ওই নির্দেশনায়। তবে রবিবার মধ্যরাত থেকে শ্রীনগর জেলায় ১৪৪ ধারা কার্যকরের কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
ভারতীয় সংবিধানে যা বলা আছে কাশ্মীর নিয়ে
ভারতীয় সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়, সেটি বাতিল করা ছিল মোদি-অমিত শাহ জুটির অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। আর তারাই এখন প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সঙ্গে আছে লোকসভায় বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সুতরাং, সংসদীয় পদ্ধতিতে বিজেপি জোট চাইলেই কাশ্মীর নিয়ে তাদের নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পরে। আর সেটি করলে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে কাশ্মীরিদের ভেতর, তা নিয়ন্ত্রণেই বাড়তি সেনা পাঠানো হয়েছে কি-না, তা সময়ই বলে দেবে।
ভারতীয় সংবিধানের দু’টি অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে অন্য রাজ্যগুলো থেকে কিছুটা বেশি মর্যাদা দেয়। ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সেখানে এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। তাদের নিজস্ব সংবিধান আছে, পতাকা আছে, আছে আলাদা জাতীয় সংগীতও। এছাড়া, সংবিধানের ৩৫-ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাশ্মীরের বাসিন্দা নয় এমন কেউ সেখানকার সম্পদের মালিক হতে পারবে না।
মূলত, এ অনুচ্ছেদ দুটোই বাতিল করতে চায় বিজেপি সরকার। তবে ৩৫-ক নিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান। একারণে, বিকল্প পথ হিসেবে জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ ভেঙে আলাদা তিনটি রাজ্য ঘোষণা করতে পারে সরকার, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। কারণ, এটি করলেই কাশ্মীরের স্বতন্ত্র স্বীকৃতি আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাবে। এছাড়া, মুসলমান অধ্যুষিত রাজ্যটিতে অমুসলমানদের সংখ্যা ও ব্যবসা বাড়ানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করার পরিকল্পনা থাকতে পারে বলেও ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কারণ, সামনেই কাশ্মীরের স্থানীয় নির্বাচন, বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে দ্রুত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মিরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা সম্বলিত ধারা ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বিলুপ্ত করা হতে পারে ভারতীয় সংবিধান থেকে, এরফলে কাশ্মীর ভারতের অন্যান্য সাধারণ রাজ্যের মতো করেই ভাগ করা হবে, পুনর্বিন্যাস করা হবে আইনসভার আসনও।
রাজনৈতিক কৌশল হোক বা নিরাপত্তার খাতিরেই, কাশ্মীরে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার দ্রুত অবসান হোক, এমনটাই আশা সাধারণ মানুষের।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রাজু
হেড অফিস : প্রস্তাবিত (১ম তলা),৯৮, নয়াপল্টন,ঢাকা-১০০০
বানিজ্যিক এলাকা: বাইপাইল আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা।
মফস্বল কার্যালয়: মেইন রোড (২য় তলা),কেশবপুর,যশোর।
নিউজ-মেইল: dailyamaderbd24@gmail.com
নিউজ রুমঃ রাজু:- ০১৭১১-১৩৯৪২০
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম