আওরঙ্গজেব কামাল।। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎসবমুখর পরিবেশ, বিপুল জনসমাগম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা-সব মিলিয়ে এটি যেন কেবল একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং একটি বড় রাজনৈতিক মোড়।
তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা গেছে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের উচ্ছ্বাস। দলীয় কার্যালয়, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় উৎসুক জনতার ঢল নামে। একইসঙ্গে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে সর্বোচ্চ তৎপরতায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও দৃঢ় করেছে। আগের থেকে বিএনপি’র নিয়ম কানুন এবং ধারাবাহিকতা আরো অনেক মজবুত হয়েছে।
তারেক রহমান চাই বিএনপিকে সুন্দরভাবে সাজাতে।
ইতিমধ্যেই দলটি তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতার মাধ্যমে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের পথে অগ্রসর হয়েছে। এতে করে আগামী দিনের রাজনৈতিক সমীকরণে বিএনপি নতুন করে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও রাজনৈতিক সমীকরণের জামাতের সাথে বিশেষ এক হিসেব নিকেশ ও রয়েছে বলে সাধারণ জনগণের মধ্যে এমন আলোচনা রয়েছে। এছাড়া এনসিপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে নির্বাচনের আগে তাদের দাবি যেন পূরণ হয়। তারা বিএনপি ও জামাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। আওয়ামীলীগ কে পূর্ণ জীবিত করার জন্য তারা নাকি কাজ করছে। অবশ্যই এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে দলের নেতৃবৃন্দ। এদিকে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা কেবল বিএনপির অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ দল ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেনযা দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। অনেকেই এটিকে চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে-এই প্রত্যাবর্তন ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও সরকার গঠনের সমীকরণে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও তারেক রহমান দলের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এবার সরাসরি মাঠে তার উপস্থিতি বিএনপিকে আরও সক্রিয় ও আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক কৌশলের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি শুধু একটি দলের জন্য নয়, বরং পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্যই একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। সামনে এই পরিবর্তনের বাস্তব প্রতিফলন কতটা গভীর হবে—সেদিকেই এখন দেশের রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি। তবে আমি মনে করি আগামী নির্বাচন হবে গণতন্ত্রের জন্মের এক নতুন ইতিহাস। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা যথার্থ হলে হয়তো বাংলাদেশের জনগণ আবারো গণতন্ত্রের সুশীতল ছায়াতলে থাকতে পারবে। অন্যথায় আবারো কোন এক গণঅভ্যুত্থানের অপেক্ষায় থাকবে দেশের জনসাধারণ।
লেখক ও গবেষক: আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি ঢাকা প্রেসক্লাব ও আন্তর্জাতিক প্রেস ক্লাব।