মুহাম্মদ আল-বাহলুল।। ইসলামের খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহের মাঝে প্রধান এক উপাদান নামাজ। যে পাঁচটি মূল স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে ইসলামের সম্পূর্ণ প্রাসাদ তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম হল নামাজ। সুতরাং একজন ব্যক্তির নামাজের উপরই তার ইসলামী জীবন যাপন পরিচালনার বিষয় অনেকাংশেই নির্ভর করে।
নামাজ আদায় করতে গিয়ে অনেক সময় নামাজীরা এমন সাধারণ কিছু ভুল করে ফেলেন, যার ফলে তাদের নামাজ যথার্থ ভাবে আদায় হয়না। এর ফলে নামাজ থেকে তারা যথার্থ কল্যাণ অর্জন করতে পারেন না।
এখানে নামাজ আদায়ে নামাজীদের করা বিভিন্ন ভুল থেকে আটটি ভুল সম্পর্কে উল্লেখ করা হল।
অনেক নামাজীই খুব দ্রুত নামাজ আদায় করেন। নামাজ আদায়ের সময় ঠিকমত রুকু-সেজদা না করেই তারা দ্রুত তারা নামাজ আদায় করেন।
রাসূল (সা.) আমাদের যথাযথ আদবের সাথে যথার্থ সময় নিয়ে আমাদের নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। যথাযথ সময় নিয়ে কিয়াম, রুকু, সেজদা ও বসার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) একবার মসজিদে প্রবেশ করেন। তার পরপরই অপর এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করে। এরপর সে রাসূল (সা.) এর কাছে এসে তাকে সালাম করে। রাসূল (সা.) তার সালামের জবাব নেওয়ার পর বলেন, “যাও, নামাজ পড়। তুমি নামাজ পড়োনি।”
লোকটি ফিরে গিয়ে নামাজ আদায় করলো এবং নামাজ আদায় শেষে আবার রাসূল (সা.) কে সালাম করলো। রাসূল (সা.) তার সালামের জবাব নিয়ে বললেন, “যাও, নামাজ পড়। তুমি নামাজ পড়োনি।”
এভাবে তিনবার তিনি লোকটিকে পুনরায় নামাজ পড়তে পাঠালেন।
শেষে লোকটি বললো, “তার কসম যিনি আপনাকে সত্যের বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন। আমি এর থেকে উত্তম আর কিছুই করতে পারবো না। আমাকে শিক্ষা দিন।”
রাসূল (সা.) তখন বলেন, “যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর দিবে। এরপর কুরআন থেকে তোমার জন্য সহজ কিছু পাঠ কর। এরপর রুকুতে যাও এবং রুকুতে সম্পূর্ণভাবে স্থির হয়ে নাও। এরপর স্থিরভাবে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াও। এরপর সেজদায় যাও এবং সেজদায় সম্পূর্ণ স্থির হয়ে নাও। এরপর সেজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বস। এভাবে করে তুমি সম্পূর্ণ নামাজ আদায় করো।” (নাসায়ী)
অধিকাংশ আলেমরাই একমত হয়েছেন, নামাজের মধ্যে অধিক নড়াচড়া ও শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়ানো নামাজকে নষ্ট করতে পারে। এটি যেমন ব্যক্তির নিজের নামাজের খুশুকে নষ্ট করে একইভাবে তা জামায়াতে অন্যের নামাজের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।
কুরআনে মুমিনদের নামাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয় অবলম্বনকারী।” (সূরা মুমিনুন, আয়াত: ১-২)
জামায়াতে নামাজের সময় ইমামের আগে আগে মুসল্লীর যাওয়া অপর এক সাধারণ ত্রুটি। অনেক মুসল্লীই জামায়াতে নামাজের সময় ইমামের আগে আগে রুকু-সেজদায় চলে যাওয়া বা রুকু-সেজদা থেকে উঠে যান। রাসূল (সা.) জামায়াতে নামাজ পড়ার সময় স্পষ্টভাবে ইমামকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং ইমামের আগে আগে যাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা দিয়েছেন।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, “ইমাম অনুসরণ করার জন্য। সুতরাং, তোমরা রুকু কর যখন সে রুকু করে এবং মাথা তোল যখন সে মাথা তোলে।” (বুখারী)
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ইমামের আগে তার মাথা তোলে তার কি এই ভয় নেই যে আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথায় পরিবর্তন করে দিতে পারেন বা তার শরীরকে গাধার শরীরে পরিণত করে দিতে পারেন?” (বুখারী)
সেজদার সময় রাসূল (সা.) স্পষ্টভাবে শরীরের সাতটি অংশকে ভূমির সাথে স্পর্শ করিয়ে সেজদা করার নির্দেশ দিয়েছেন; কপাল সহ নাক, দুই হাত, দুই হাটু এবং দুই পা। অনেকেরই সেজদার সময় এগুলোর কোন কোনটি ভূমি স্পর্শ করেনা। ফলে তাদের সেজদা যথার্থ ভাবে সম্পন্ন হয়না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাতটি অঙ্গের মাধ্যমে সেজদা করতে যেমন নাকের অগ্রভাগ সহ কপাল, দুই হাত, দুই হাটু এবং দুই পায়ের পাতা এবং (নামাজে) কাপড় বা চুল নিয়ে খেলোনা।” (বুখারী)
অনেকে আবার সেজদার সময় হাতের বাহুকে পুরোপুরিভাবে ভূমির উপর বিছিয়ে দেয়। রাসূল (সা.) এভাবে বাহুকে বিছিয়ে দিতে প্রচন্ডভাবে নিষেধ করেছেন।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“সেজদার সময় তোমাদের বাহুকে ভূমির উপর কুকুরের মত বিছিয়ে দিয়োনা।” (নাসায়ী)
নামাজের সময় অনেকেরই সতর অনাবৃত হয়ে পড়ে। কিন্তু নামাজের প্রধানতম একটি শর্ত হলো সতর ঢাকা। সুতরাং এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
অনেক সময় জামায়াতে নামাজ শুরু হয়ে গেলে অনেক মুসল্লীই ইমাম যেখানে থাকেন, সেখানে এসে ইমামকে অনুসরণ করা শুরু করেন। তারা নামাজ শুরুর জন্য তাকবীর তাহরিমা করতে ভুলে যান। কিন্তু নামাজের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ হলো তাকবির তাহরীমা। এটি ছেড়ে দেওয়া কখনোই উচিত হবেনা।
ইমামের নামাজ শুরু করার কিছু সময় পর যদি মুসল্লী তার সাথে নামাজে যোগ দেন অথবা ইমামের রুকু-সিজদার পর মুসল্লী তার সাথে নামাজে যোগ দেন, তবে তাকে প্রথমে তাকবির তাহরিমা করে নামাজ শুরু করে ইমামের সাথে নামাজে অংশগ্রহণ করতে হবে।
নামাজ আদায়ের সময় কেউ কেউ নামাজে মনোযোগ না দিয়ে যত্রতত্র তাকাতে থাকেন। এ ধরণের আচরণকারীদের রাসূল (সা.) কঠোর সর্তকতা প্রদান করে এই আচরণ থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“কি করে কিছু ব্যক্তি নামাজ আদায়ের সময় তাদের চোখকে আকাশের দিকে তুলতে পারে? নামাজের সময় লোকদের আকাশের দিকে চোখ তোলা থেকে বিরত থাকা উচিত অন্যথায় তাদের দৃষ্টিকে কেড়ে নেওয়া হতে পারে।” (বুখারী)
আল্লাহ আমাদের এ সকল ত্রুটি থেকে মুক্ত হয়ে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন।
সূত্রঃ ওয়ানপথ অবলম্বন
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রাজু
হেড অফিস : প্রস্তাবিত (১ম তলা),৯৮, নয়াপল্টন,ঢাকা-১০০০
বানিজ্যিক এলাকা: বাইপাইল আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা।
মফস্বল কার্যালয়: মেইন রোড (২য় তলা),কেশবপুর,যশোর।
নিউজ-মেইল: dailyamaderbd24@gmail.com
নিউজ রুমঃ রাজু:- ০১৭১১-১৩৯৪২০
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম