আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক।। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষকে আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষে বিভক্ত করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যিনি তোমাদের (নারী-পুরুষ) কে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সঙ্গীনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরকে যাঞ্চা করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। (সুরা নিসা : আয়াত ১)
ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা। ইসলামের আগমনের আগে সামাজিকভাবে নারীদের কোনো মর্যাদাই ছিল না। নারীদের প্রতি করা হতো অমানবিক আচরণ। প্রাক ইসলামি যুগের দিকে তাকালেই তা অনুধাবন করা যায় যে, নারীর মর্যাদা প্রদানে ইসলামের অবদান কতবেশি।
ছোট্ট একটি উপমাতেই তা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। আর তাহলো-‘অপমান বা পাপ মনে করে কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া ছিল তৎতকালীন সময়ের নিত্য দিনের ঘটনা।’
ইসলামের আগমনের আগে কন্যা শিশু জন্মদানকে পাপ বা অপমান মনে করা হতো। যে কারণে কন্যা জন্ম হওয়ার পর সে শিশুটির বেঁচে থাকার কোনো অধিকার ছিল না। সামাজিক মান-সম্মানের অজুহাতে ছোট্ট কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দিয়ে দেয়া হতো। আর যে কয়জন নারী বেঁচে থাকা সুযোগ পেত তাদের করা হত নর্তকি। তাদের বিবস্ত্র অবস্থায় কা'বার চারপাশে জোর করে নাচানো হতো। নারীদের কোন অধিকার ছিল না।
ইসলাম এ অমানবিক সামাজিক বিপর্যয় থেকে প্রথমেই নারীর বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মর্যাদা প্রদান করেছে। জীবন্ত কবর দেয়ার মত ভয়ংকর প্রথা থেকে নারীকে বাঁচাতে প্রিয়নবি রসুলাল্লাহ হাদিসে ঘোষণা করেছেন-
‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে বা তিনটা বোন থাকে বা দুটি কন্যা থাকে বা দুটি বোন থাকে; আর সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে ও তাদের ব্যাপারে (অন্তরে) আল্লাহর ভয় রেখে কাজ করে; তার বিনিময় সে চিরস্থায়ী জান্নাতে পৌঁছে যাবে।’ (তিরমিজি)
ইসলামের প্রাথমিক যুগে কন্যা শিশুকে জীবন্ত হত্যা থেকে বাঁচাতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী জাতির লালন-পালনের ব্যাপারে এ ফজিলতপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন।
অন্য হাদিসে প্রিয়নবি রসুলাল্লাহ বলেছেন-যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে আর সে তাদের লালন-পালনের কষ্ট সহ্য করবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরণ-পোষণ দেবে; কেয়ামতের দিন ওই কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের পথে প্রতিবন্ধক তথা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’ (ইবনে মাজাহ)
ফজিলতমূলক নসিহত পেশ করার পর যখন কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা কিছুটা কমে আসে; তখন প্রিয়নবি রসুল (সা:) ঘোষণা করেন-আমি তোমাদের গুরুত্বের সঙ্গে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, তোমরা নারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। তোমরা আমার এ নির্দেশ গ্রহণ কর।’ (বুখারি)
বর্তমান সময়ের মতো নারীদের পক্ষে যখন আন্দোলন বা অধিকার অধিকার বলে চিৎকার করার মতো কোনো মানুষ ছিল না; তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। সে সময় নারীদেরকে শুধুমাত্র ভোগের সামগ্রী হিসেবেই হেয় তথা অপমানকর দৃষ্টিতে দেখা হত।
রসুল (সা:) অন্ধকার যুগের অজ্ঞ ও বর্বর মানুষের কাছে নারীদের সর্বোত্তম মর্যাদা ও সম্মানের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন-মায়ের পায়ের তলে রয়েছে জান্নাত।’ যাতে কোনো মানুষ এ মায়ের জাতি নারীদের সঙ্গে খারাপ বা অন্যায়মূলক কোনো আচরণ করতে না পারে।
রসুল (সা:) মক্কার নারীদের অধিকার ও মর্যাদা দিয়েই ক্ষান্ত হন নি। তিনি নারীদের উপর শালিনতার চাদর টেনে দিয়ে তাদেরকে অস্ত্র চালনার দিক্ষা হতে শুরু করে সমাজের সকল কাজ পরিচালনার শিক্ষা দিয়েছিলেন। ফলে নারীরা সমাজের প্রতিটা সেক্টরে নিজেদের যোগ্যতার প্রতিফলন ঘটিয়ে রণাঙ্গনেও নিজেদের শক্তি ও সাহসিকতার নজির সৃষ্টি করেছেন।
নারীরা তাদের যুদ্ধ কৌশলে এতটাই এগিয়েছিল যে, যখন পুরুষরা যুদ্ধ থেকে পরাজিত হয়ে ফিরে যেতে চাইত তখন নারীরা তাদের ধিক্কার জানিয়ে আবার উদ্যোমতা ফিরিয়ে আনত। রসুলাল্লাহর সময়ের নারীরা একেক জন ছিল দূর্ধষ সাহসী নারী।
কিন্তু বর্তমানে কোরআনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নারীদের করেছে ঘরবন্দী। পর্দার নাম নারীকে বস্তাবন্দি করেই ক্ষান্ত হয়নি। নারী অপয়া, শয়তানের দোসর, জাহান্নামের খড়ি বলে নারীর অধিকার, মর্যাদাকে পদদলিত করছে।
বর্তমানে আমরা আবারও সেই জাহিলিয়াত কে দেখতে পাচ্ছি। আজ অধুনিকতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেও দেখা যাচ্ছে ধর্ষণএর মত নেক্কার জনক অপরাধ করেও নারীর চলাফেরা ও পোশাকের উপরেই দোষ চাপানো হচ্ছে। যে সমাজে ৩ বছরের শিশু, ৮০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষিত হয় সে সমাজ আর যাই হোক ইসলামি সমাজ বলা যায় না।
তাহলে এই যে মুসলিম দাবীদার এই জাতি! এই জাতি কি সত্যিকার অর্থে মুসলিম রয়েছে? এই মঞ্চে মঞ্চে বসে বসে ধর্মের নামে ওয়াজ নসিহত করছে, তারা কোন ইসলাম শিক্ষা দিচ্ছে মানুষকে সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এই যে মিছিল, সভা সেমিনারে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণোয়ন হচ্ছে। টিভিতে টক'শো হচ্ছে, পত্রিকার হেডলাইনে নারী অধিকার নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না নারী সমাজ। তাহলে এখন কি করণীয়!
নারীর প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদা কি কথিত ধর্মের ধারকদের তৈরী করা ফতোয়ায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব? তারা তো ফতোয়া দিয়েছে নারীরা ঘরে থাকবে, বাহিরে গেলে পোশাকের বস্তা জরিয়ে বাবা, ভাইয়ের সাথে যাবে। কিন্তু আজকাল তো ঘরে এসেও ধর্ষণ করা হচ্ছে, আত্বীয়ের কাছে ধর্ষিত হচ্ছে। তাহলে উপায়? ঐ মেকি আবরণ আর ভূয়া ফতোয়া তো নারীদের মুক্তি দিতে পারছে না এটা আপনাদের চোখের সামনে।
তাহলে কি আমরা নারীবাদীদের কাছে যাবো! তারা দু একটা নারীকে দিয়ে দেশ পরিচালিত করছে, বিমানের ককপিটে বসাচ্ছে, চাঁদে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমাজে বাকি নারীরা! তাদের মুক্তি কিভাবে মিলবে?
সমাজে ৫% নারীর অধিকার নিশ্চিত করলেই নারী মুক্তি, নারী জাগরণ হয়ে যায় না। বাকি ৯৫% নারীর ভাগ্যকে পদতলে মাড়িয়ে সুশীল সমাজ, সভ্য সমাজ বিনির্মাণ কি কখনও সম্ভব?
তাহলে কে এই সংখ্যাগুরু নারীর দায়িত্ব নিবে, কে এই নারীদের মুক্তির পথ দেখাবে, কে এই নারীদের প্রাপ্ত মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়ে এই পঁচে যাওয়া সমাজের পুনঃনির্মাণ করবে?
এই দায়িত্ব নেবো আমরা হেযবুত তওহীদ। আমরা নারীদের আবার সেই সাড়ে ১৩০০ বছর আগের স্বর্গরাজ্য উপহার দিবো। যেখানে একা একটা যুবতি নারী রাতের অন্ধকারে স্বর্ণালংকার পরিহিত অবস্থায় হেঁটে যাবে মাইলের পর মাইল। তার মনে কোন ভয় থাকবে না। আমরা আবার সেই সভ্যতার নির্মাণে পথে নেমেছি। আপনারা থাকবেন আমাদের সাথে।
আমাদেরবাংলাদেশ.কম/রাজু
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রাজু
হেড অফিস : প্রস্তাবিত (১ম তলা),৯৮, নয়াপল্টন,ঢাকা-১০০০
বানিজ্যিক এলাকা: বাইপাইল আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা।
মফস্বল কার্যালয়: মেইন রোড (২য় তলা),কেশবপুর,যশোর।
নিউজ-মেইল: dailyamaderbd24@gmail.com
নিউজ রুমঃ রাজু:- ০১৭১১-১৩৯৪২০
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম