আরিফ মন্ডল, বিশষ প্র্রতিনিধি:
ফুলের রাজ্য হিসাবে পরিচিত সাভারের বিরুলিয়া এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে হাট-বাজার। ফ্রেব্রুয়ারি এলেই যেন উৎসবে মেতে ওঠে বিরুলিয়ার ফুল বাগান ও বাজারগুলো। বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে মহাব্যস্ত সময় পার করেছন ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা। দেশের গোলাপ ফুলের চাহিদারসিংহভাগ ফুল আসে এ এলাকা থেকে।
তিন দিবসকে সামনে রেখে প্রায় তিন কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা এবার ফুল চাষীদের।তাই রাত-দিন শ্রম দিয়ে ফুল ফলানোই ব্যাস্ত চাষীরা।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কয়েকদিন ধরেই বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই তিন দিবসের জন্য উৎপাদিত ফুল বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে আসছেচাষীরা। পাইকার ও খুচরা পাইকাররা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুল কিনতে আসছে এই গোলাপ রাজ্যে।
জানা যায়, সাভার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫০০ হেক্টর জমিতে গোলপের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, ভাগ্নিবাড়ি, সাদুল্যাপুর ও শ্যামপুরএলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের পাশে, বাড়ির সামনে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে কোন জায়গায় ফাঁকা নেই, শুধু গোলাপ আর গোলাপ। এ যেন গোলাপের স্বপ্নরাজ্য।সূর্য উদয়েরপরপরেই প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল কাটা, ফুল বাছাই, ফুল ভেজানো, ফুল বাঁধা সবই যেন কৃষক শেষ করেন সন্ধ্যের আগেই। কারণ সন্ধ্যোর পরই জমে ওঠেএখানকার গোলাপের হাটগুলো। এখা্নেই পাইকাররা ফুল কিনে সর্ববৃহত ফুল মার্কেট ঢাকার শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে ফুলের চাহিদা পুরন করে আসছে।
ফুলের বাগানে দেখা হয় কৃষক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তার ফুলের বাগান নিয়ে কথা বলতেই তিনি বলেন, এর আগের বছর আমাদের উপর দিয়ে আনেক ঝড় বয়ে গেছে। ফুলে রোগঅইছিলো তাই ফুলের ভালো ফলন হয়নাই। ফুল বেশি বিক্রিও করতে পারি নাই। তবে এবার কোনো ঝামেলা নাই ভালো ফুল হইছে। এবার মনে হয় ঘড়ে কিছু টাকা আইবো।
এখানে মেরিন্ডা, হাজারি, লিংকন, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, লাল গোলাপের চাষ হয় ব্যাপক পরিমানে। তবে লাল গোলাপের চাহিদা বাজারে বেশী থাকায় শুধু গোলাপ চাষেই ঝুকছেচাষীরা।
বিরুলিয়া ফুল চাষী সমিতির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসির জানান, বসন্ত বরণ ও ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বাজার জমে উঠেছে। প্রতিদিন বিরুলিয়ার বাজার গুলোতে প্রায়আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গোলাপ ফুলের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে, বিষয়টি মাথায় রেখে লাভবান হতে আমরা গোলাপের চাষ করি। তবে দর্শনার্থীরঅতিরিক্ত চাপ ও যত্রতত্র ঘোরা-ফেরায় উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত ফুল সরবরাহ করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা।
ফুলচাষী আমজাদ হোসেন বলেন, তাদের উপাদিত ফুল বিদেশে রপ্তানী করতে পারলে তারা লাভবান হতেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাদেন কোন ঋণ সুবিধা দেওয়া হয় না।ঋণসুবিধা পেলে তারা গোলাপ চাষে আরো উৎসাহিত হবেন। তবে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা।
ফুলচাষীরা বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচা-কেনা হয় তার অনেকটাই পুরোন হয় আমাদের উৎপাদিত ফুল দিয়ে। তবে এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলের যেমনউৎপাদন বেশি তেমনি চাহিদাও।
আসছে ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত বরণ, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা কমপক্ষে ৫-৭ কোটি টাকারফুল বিক্রির টার্গেট করেছেন। এরমধ্যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ফুলহাটে কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে।
পাইকারী জানান, এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বেশি ফুল বিক্রি হবে। বাজারে জারবেরা, গোলাপ, রজনীগন্ধ ফুলের চাহিদা বেশি। কৃষকরাও দাম ভালো পাবে। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানথেকে অর্ডার পাচ্ছি। আশাকরি সময়মত ও চাহিদানুযায়ী ফুল সরবরাহ করতে পারবো।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, সাভারের বিরুলিয়ায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এই ফুল চাষ করেই জিবিকানির্বাহ করে। একর প্রতি ফুল উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন কৃষকরা ফুল চাষে ঝুকছেন।
তিনি আরও বলেন, কাল থেকে শুরু করে সামনে তিনটি দিবস। এ নিয়ে ফুল গ্রামে এখন উৎসব বইছে। গত বছরের তুলনায় এবছর ফুলের ফলন ভালোই হয়েছে। আমদের সাভারেরফুলের মান অনেক ভালো। স্বতেজ ও টাটকা অবস্থায় ঢাকার বাজারে বিক্রি করতে পারায় দামও বেশি পাচ্ছে কৃষক ও ব্যাবসায়ীরা।
গ্রামবসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো আর ওইযুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করে। খুব কম সময়ের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গ্রামটিতে।
সম্পাদকীয়,বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৩৮/১, আরামবাগ,মতিঝিল-ঢাকা-১০০০
যোগাযোগ: মোবাইল ০১৭১৩-৩৩২১৫৯- ০১৩১৮-৬৮০৩৮১
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম