আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক।। ফেসবুকে মেয়ের নামে আইডি খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করার দায়ে মো. সুজাউল হক (২৭) নামে এক প্রতারককে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ( ২৭ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালী থানার পুলিশ তাকে আটক করে।
আটক মো. সুজাউল হক গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার ফুলবাড়ির মৃত আইনুল হক ও শাহিনা হক ছেলে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বায়েজিদ নগর আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আসামির জন্ম গাইবান্ধা জেলা হলেও জন্মের পর থেকে চট্টগ্রামে বেড়ে উঠে। বাবা ছিলেন বায়িং হাউসের ব্যবসায়ী। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে সে ছিল দ্বিতীয়। ২০০৯ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর কোনও রকমে এইচএসসি পাস করে সে। অভাব-অনটনের সংসারে ইনকামের পথ হিসেবে বেছে নেয় ফেসবুক। প্রথমে স্টিভ ডেভিড নামে ফেসবুক আইডি খুলে মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়াইতে চাইলেও সে বুঝতে পারে ফেসবুক দুনিয়ায় পুরুষ আইডি তেমন গুরুত্ব পায় না। আর তখনই সে বেছে নেয় ছদ্মবেশ। স্টিভ ডেভিড পরবর্তীতে হয়ে যায় রাইসা মেহজাবিন। শুরু হয় ফেইসবুক দুনিয়ার ফেইক ফ্রেন্ডশীপ। এক এক করে আসতে থাকে বন্ধুত্বের আহ্বান। এভাবে রাইসা মেহজাবিন ফেসবুকে হয়ে উঠে সেলিব্রেটি। রাইসা মেহজাবিন আইডিতে তিনি লোড করতে থাকেন সুনির্দিষ্ট একটি আইডি থেকে সংগৃহীত রূপবতী একটি মেয়ের নানান ছবি। আর মানুষের দূর্বলতাগুলোকে পুঁজি করে আয় করতে থাকে হাজার হাজার টাকা। তার ফ্রেন্ডলিস্টে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, গামেন্টসকর্মী থেকে শুরু করে আছে মাল্টি লেভেল কোম্পানির কর্মকর্তারাও। ফেসবুক দুনিয়ার সেলিব্রেটি রাইসা মেহজাবিন ফেসবুকে বিজ্ঞাপন ছাড়ে তার মায়ের অসুস্থতার খবর। প্রয়োজন হয় চিকিৎসার টাকা। আর রাইসা মেহজাবিন এর ফাঁদে পড়ে সকলে দু’হাত খুলে টাকা দান করতে থাকে তার দেয়া বিকাশ নম্বরে। টাকা সংগ্রহের পরই বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ নম্বর। ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ভিকটিম বাদও পড়েন। গড়ে তোলেন নতুন বন্ধুত্ব। রাইসা মেহজাবিন কখনও ফোনে কথা বলতেন না। তিনি সবসময় ফেসবুক চ্যাটে বিশ্বাস করতেন। যদি কখনও কথা বলতে হয়, আর তখনই রাইসা মেহজাবিন হয়ে যায় সুজাউল হক প্রকাশ তানভীর। তানভীর কথা বলে পরিচয় দেয় রাইসা মেহজাবিন তার কাজিন।
এভাবে কখনও যদি রাইসা মেহজাবিন কোনও অসুস্থতার ছবি প্রকাশ করতে হয় তখনই তিনি ইন্টারনেটের দুনিয়া থেকে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসারত রোগীর ছবি নামিয়ে তা নিজের খবর হিসেবে ফেসবুক দুনিয়ায় তার বন্ধুদের পাঠাতেন। এভাবেই রাইসা মেহজাবিন নামীয় ফেসবুক আইডি তথা সুজাউল হক প্রকাশ তানভীর দিনের পর দিন প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে নেয় হাজার হাজার টাকা। চালাক সুজাউল হক প্রকাশ তানভীর নিজের ব্যক্তিগত আইডি সুজাউল হক থেকে মেয়েদের আর রাইসা মেহজাবিন আইডি থেকে ছেলেদের টার্গেট করতো। তার উভয় ফেসবুক আইডির বন্ধুদের বিশ্বাস করানোর জন্য সে কখনও হয়ে যেতো বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কখনও হতো রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত ইউনিসেফের কর্মী, কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিংবা বড় কোনও এনজিও ফোরামের কর্মী। ফেসবুকে কখনও কখনও আপলোড করতো সচিবালয়ের মিটিংয়ের ছবি, কিংবা বিভিন্ন সাইটে রাইসা মেহজাবিনের জন্য সাহায্যের আবেদন। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুজাউল হক প্র. তানভীর ইতোমধ্যে আত্মসাৎ করেছে হাজার হাজার টাকা। বিগত বছরখানের মধ্যে প্রতারণার শিকার হয়েছে শতাধিকবিভিন্ন পেশার নারী, পুরুষ ও ছাত্র-ছাত্রী।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, ছদ্ম নাম রাইসা মেহজাবিন আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করে সুজাউল হক নামের এক যুবক। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় চলমান মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করে মানুষ থেকে টাকা আত্মসাৎ করাই ছিল তার আসল ব্যবসা।
তিনি আরও বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বায়েজিদ এলাকা থেকে এই আসামিকে আটক করা হয়। আটক আসামি থেকে একটি রেডমি মোবাইল সেট, প্রতারণাকারীর ফেসবুক আইডি ও বিকাশ সীম জব্দ করা হয়।
সম্পাদকীয়,বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৩৮/১, আরামবাগ,মতিঝিল-ঢাকা-১০০০
যোগাযোগ: মোবাইল ০১৭১৩-৩৩২১৫৯- ০১৩১৮-৬৮০৩৮১
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম