আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক।। অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট এমন একটি পদার্থ যা কখনও নিজে নিজে জ্বলতে পারে না। অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট জ্বলে উঠতে হলে সেখানে অক্সিজেনের উপস্থিতি থাকতে হবে। বৈরুতের বিস্ফোরণের পেছনের কারণ জানাচ্ছে সাইন্টিফিক আমেরিকা এবং বিবিসি বাংলা।
আমাদের চারপাশে বাতাসে যে পরিমান অক্সিজেন আছে অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট তার চাইতে বেশি পরিমান অক্সিজেনের ঘনত্ব তৈরী করে আর সে কারণেই খনি বিস্ফোরণের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। তবে এই অ্যামুনিয়াম নাইট্রেডের সঙ্গে তখন মেশানো হয় তেল এবং অন্য জ্বালানি। অ্যামোনিয়া নাইট্রেটকে বরং বলা যায় 'অক্সিডাইজার'– অর্থাৎ যা আগুনে আরো অক্সিজেন টেনে আনে এবং আগুন আরো বেশি জ্বলে ওঠে।
তবে অতিরিক্ত তাপেও নিজে নিজে জ্বলে উঠতে পারে এই অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট। কারণ অতিরিক্ত তাপের ফলে অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট থেকে তৈরি হয় নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্প। যেটা অ্যামুনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয়।
আর অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট মজুত স্থলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে যদি তার আশেপাশে কোথাও আগ্নিকাণ্ড ঘটে। চীনের তিয়ানজিন শহরে এক ওয়্যারহাউজে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ১৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়। সেখানে একাধিক ওয়্যারহাউজে অ্যামোনিয়া নাইট্রেট ছাড়াও পটাসিয়াম নাইট্রেট এবং সোডিয়াম সায়ানাইডের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ একই সঙ্গে রাখা ছিল।
চীনা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ার কারণে প্রথমে নাইট্রোসেলুলোজ নামে একটি দাহ্য রাসায়নিক পদার্থে আপনা থেকেই আগুন ধরে যায়। তা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে অ্যামুনিয়াম নাইট্রেটের গুদামে, এবং প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ঘটে।
অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ভুলবশত পানি দিয়ে সেই রাসায়নিক পদার্থের আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরো গুরুতর আকার নেয়। ওই ঘটনায় যারা মারা গিয়েছিল তাদের অধিকাংশই ছিল অগ্নিনির্বাপন কর্মী। বিস্ফো0রণটি এত শক্তিশালী ছিল যে তাতে ছোট আকারের ভূমিকম্প পর্যন্ত হয়েছিল।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস সিটিতে ১৯৪৭ সালের ১৬ই এপ্রিল এক অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ ঘটেছিল যাতে ৫০০ জন নিহত হয়, আহত হয় ৪ হাজার লোক। টেক্সাস সিটি বন্দরে একটি জাহাজ থেকে ২,৩০০ টন অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট খালাস করার সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে পুরো ডক এলাকা ধ্বংস হয়, আশপাশে থাকা অন্য কয়েকটি জাহাজে কয়েকদিন ধরে আগুন জ্বলতে থাকে, এমনকি আকাশে উড়ন্ত দুটি ছোট বিমানও ধ্বংস হয়।
বৈরুতের এ বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ফুটেজ দেখে ধারণা করা হচ্ছে বৈরুত বন্দরের আশেপাশে কোথাও আগুন জ্বলেছিল। আর সেখান থেকেই এই বিস্ফোরণ। তবে এক সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষক এ বিষয়ে তাদের মতামত দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিলিপ ইনগ্রাম বলেন, অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট নিজে কোন বিস্ফোরক পদার্থ নয়, তবে বিশেষ কিছু অবস্থায় তা বিস্ফেরকে পরিণত হতে পারে - বলছেন ।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএর শিক্ষক গ্যাবিয়েল ডা সিলভা ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানকে বলেন, অ্যামুনিয়াম নাইট্রেটে আগুন ধরানো বা একটা বিস্ফোরণ ঘটার মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। তবে ডা সিলভা বলছিলেন, তার ধারণা কোনভাবে এই অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট দূষিত হয়ে গেছে - হয়তো তেল বা অন্য কিছুর সংস্পর্শে এসে, এবং সেটাই এই বিস্ফোরণের কারণ।
আগুনের সংস্পর্শে এলে এটি অত্যন্ত সক্রিয় বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। আর বিস্ফোরিত হলে অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অ্যামুনিয়ার মত বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। এ কারণে অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট মজুদ করে রাথার জন্য কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয় - বিশেষ করে মজুদ করার জায়গাকে এমনভাবে নিরাপদ করতে হয় যেন আগুন না লাগে। এছাড়া লক্ষ্য রাখতে হয় যেন কোনো নালা বা ড্রেইনে অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট জমা হয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি না করতে পারে।
এদিকে বৈরুতের ওই গুদামে অনিরাপদ অবস্থায় ৬ বছর ধরে পড়ে ছিল অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট। ওয়্যারহাউসটিতে ২৭০০ টন অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট ছিল, এবং তা ছয় বছর ধরে অনিরাপদ অবস্থায় সেখানে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২০১৩ সালে একটি জাহাজে করে এই অ্যামুনিয়াম নাইট্রেট বৈরুত বন্দরে এসেছিল। কিন্তু কিভাবে তাতে আগুন লাগলো তা এখনো স্পষ্ট নয়।
গ্যাব্রিয়েল ডা সিলভা বলেন, ‘এ বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে যে রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে তা অপসারিত হতে বেশি সময় লাগবে না কিন্তু যদি তা বৃষ্টির পানিতে এসিডের কণা সৃষ্টি করার মতো কিছু ঘটায় - তাহলে তা পরবর্তীকালে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।’
বিস্ফোরণে বৈরুতের বন্দর এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই বিস্ফোরণের ঝাপটায় সাগরে ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছাস হয়েছিল। তাতে অনেক বাড়ি ধ্বংস হয়ে ২ হাজার লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে। বৈরুতের বিস্ফোরণটিও এত শক্তিশালী ছিল যে প্রায় দেড়শ’ মাইল দূরের সাইপ্রাস দ্বীপের বাড়িঘরের দরজা-জানালা তাতে কেঁপে উঠেছিল বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এ বিস্ফোরণ হয় এবং এর প্রচণ্ডতায় পুরো বৈরুত শহর কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণে সেন্ট্রাল বৈরুতের আকাশ ধোঁয়ার কুন্ডুলিতে ছেয়ে যায়। অনেক ভবন ধসে গেছে। বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩৭ জন মারা গেছেন এবং প্রায় ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
আমাদেরবাংলাদেশ/রিফাত
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রাজু
হেড অফিস : প্রস্তাবিত (১ম তলা),৯৮, নয়াপল্টন,ঢাকা-১০০০
বানিজ্যিক এলাকা: বাইপাইল আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা।
মফস্বল কার্যালয়: মেইন রোড (২য় তলা),কেশবপুর,যশোর।
নিউজ-মেইল: dailyamaderbd24@gmail.com
নিউজ রুমঃ রাজু:- ০১৭১১-১৩৯৪২০
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম