মনিরামপুর (যশোর)প্রতিনিধি।। অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার ঘাট শ্রমিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পিয়ন পদে চাকরি করে মাত্র ৪ বছরেই কোটিপতি বনে গেছেন মনিরামপুরের শরিফুল ইসলাম।
তিনি উপজেলার নেহালপুর গ্রামের চায়ের দোকানদার সাহেব আলী মোল্যার ছেলে।
এর মধ্যেই তিনি মনিরামপুর পৌর এলাকায় ক্রয়কৃত ২৫ শতক জমির উপর অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন বহুতল ভবন। একইসঙ্গে ক্রয় করেছেন বেশ কয়েক বিঘা ফসলি জমি।
এছাড়াও তার এক চাচাত ভাইয়ের মাধ্যমে টাকা দিয়ে উচ্চ হারে সুদ নিয়ে নিঃস্ব করছেন লোকজনদের। শরিফুল ইসলামের কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত একই গ্রামের আজহার আলী মোল্যা দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত যশোর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে বৃহস্পতিবার অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে,২০১২ সালে বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্পে সাবেক হুইপসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মারপিট,সরকারি গাড়িতে অগ্নি সংযোগ ও পুলিশকে মারপিটের মামলার আসামি মনিরামপুরের নেহালপুর গ্রামের সাহেব আলী মোল্যার ছেলে শরিফুল ইসলাম।
এক সময় নওয়াড়ায় ঘাট শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে পিয়ন পদে যোগদান করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার মাত্র চার বছরের মধ্যেই তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
মনিরামপুর পৌর শহরে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন,হয়েছেন বহুদামী কয়েক বিঘা ফসলি জমির মালিক।
এলাকাবাসী জানায়,মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের পিয়ন শরিফুল ইসলাম সম্প্রতি মনিরামপুরের নেহালপুর গ্রামের আজহার আলীর কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন ৪০ শতক জমি। একই গ্রামের মোশারফ মোল্যা ও আতিয়ার মোল্যার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন ১৩ শতক জমি।নওয়াপাড়ার হাচান মাস্টারের কাছ থেকে ৪২ শতক জমি ক্রয় করেছেন ১৭ লাখ টাকা দিয়ে।
মনিরামপুরের পাঁচাকড়ি গ্রামের মুকুল গাজীর কাছ থেকে ১৭ শতক জমি ক্রয় করেছেন সাড়ে ১৭ লাখ টাকা দিয়ে। এছাড়া মনিরামপুর পৌর এলাকার জয়নগর গ্রামে ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে ২৫ শতক জমি কিনে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন।
একই সাথে শরিফুল ইসলাম ২ লাখ টাকায় নেহালপুর গ্রামের তরুন পরামানিকের কাছ থেকে ২১ শতক জমি,রেজাউল ইসলামের কাছ থেকে ৪ লক্ষাধিক টাকায় ৪২ শতক জমি এবং পাঁচাকড়ি গ্রামের জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা দিয়ে ১৮ শতক জমি বন্ধক নিয়েছেন।
এছাড়াও শরিফুল ইসলাম তার চাচাতো ভাই রবিউল ইসলাম রবির মাধ্যমে এলাকার বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের টাকা দিয়ে উচ্চ হারে সুদ নিচ্ছেন। ১ লাখ টাকা নিলে বছরে আসল বাদে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়।
অভিযোগকারী আজহার আলী মোল্যা জানান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আউট সোর্সিংয়ে পিয়ন পদে চাকরি করে শরিফুল মাত্র চার বছরে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। যা তার আয়ের সাথে কোনরকম সামঞ্জস্য নয়। তিনি পিয়ন শরিফুল ইসলামের এই অবৈধ সম্পদের উৎস অনুসন্ধান করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ অতিরিক্তি মহাপুলিশ পরিদর্শক, সিআইডি ঢাকা,সিআইডি পুলিশ সুপার যশোর ও কর কমিশনার খুলনাকে অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন।
উক্ত বিষয়ে অভিযুক্ত শরিফুল ইসলামের একমাত্র বোন মনিরামপুর উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান,আমার বাপ সাহেব আলী মোল্যা গরিব ছিলেন এটা সত্যি। আমার বাপের পৈতৃক জমি রয়েছে ৩৬ শতক। কিন্তু আমার ভাই শরিফুল ইসলাম প্রায় চার বছর যাবৎ মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। আমার জানামতে তিনি অনেক টাকা বেতন পান। তাছাড়া অনেক আউট ইনকামের সুযোগ রয়েছে। সে যেহেতু ঘুষ দিয়ে চাকরি ধরেছে সেহেতু সেও ঘুষ নিতেই পারে।
অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম বলেন,ছোটবেলা থেকেই মাঠে ঘাটে কাজ করে টাকা জমিয়ে সেই টাকা ব্যয় করে চাকরি ধরেছি। তাতে ভালো বেতন পাই এবং কিছু আউট ইনকামের লাইন আছে। তাছাড়া বাপের জমানো টাকা দিয়ে জমি জায়গা কিনেছি,বাড়ি করেছি এই কারণে অনেকে প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে। আমার অব্যাহত উন্নয়ন দেখে ও আমার চেয়ে বেশি দামে জমি কিনতে না পেরে আমার প্রতিপক্ষ মানুষকে দিয়ে বানোয়াট কথা বলাচ্ছে।
এই কারণেই তারা আমার বিরুদ্ধে দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযুক্ত শরিফুল ইসলামের বাবা সাহেব আলী মোল্যা জানান,আমি গরীব মানুষ। অনেক কষ্টে ছেলেকে চাকরি ধরিয়েছি। তার আগে ছেলে নওয়াপাড়া ঘাটে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো আর আমি চা বিক্রি করে সংসার চালিয়ে দুই ছেলে মেয়ের লেখাপড়া করিয়েছি। আমার পৈতৃক জমি রয়েছে ৩৬ শতক। কিন্তু এখন আমার কোন অভাব নেই।
শরিফুল ইসলামের নামে বিপুল পরিমাণ জায়গা জমি কেনার বিষয়ে তিনি বলেন,আমার ছেলে শরিফুল ইসলাম প্রায় চার বছর যাবৎ মন্ত্রণালয়ে চাকরি করে। আমার জানামতে সে অনেক টাকা বেতন পায়। তাছাড়া অনেক আউট ইনকামের সুযোগ রয়েছে।
সে যেহেতু টাকা দেয় সেহেতু জমি তো তার নামেই কিনতে হবে। অন্যথায় আমার নামে কিনলে আমার মৃত্যুর পর তার একমাত্র বোন সাজেদা বেগম সেই জমির ওয়ারিশ সূত্রে দাবি করবে। এবং আইনগত ভাবেও শরিফুল তা দিতে বাধ্য হবে। সেই কারণেই শরিফুলের টাকায় কেনা জমি শরিফুলের নামেই কবলা করিয়েছি।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন,আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন আইনের চোখে বড় ধরনের অপরাধ। এ ধরণের অপরাধ তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন স্ব-উদ্যোগে নোটিশ করে যে কারো কাছে হিসাব চাইতে পারে। আয়ের সাথে সম্পদ অর্জনের মিল না থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে দুদক।
আমাদেরবাংলাদেশ ডটকম/রাজু
সম্পাদকীয়,বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৩৮/১, আরামবাগ,মতিঝিল-ঢাকা-১০০০
যোগাযোগ: মোবাইল ০১৭১৩-৩৩২১৫৯- ০১৩১৮-৬৮০৩৮১
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম