মোঃ আসাদূর রহমান শার্শা প্রতিনিধি :
যশোরের বিভিন্ন মাঠে এখন বোরো ধানের সোনালী শিষ বৈশাখের বাতাসে দোল খাচ্ছে।পোকামাকড় ছাড়াই বেড়ে ওঠা সোনালি ধানের শিষ ভরে গেছে।দিগন্ত জোড়া মাঠ জুড়ে এখন সোনালি ধানের শিষে ভরে গেছে।দেখেই ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি নেই।কয়েকদিনের মধ্যে যশোরে শুরু হবে বোরো ধান কাটার উৎসব।বৈশাখের প্রথমদিকে ঝড়ে কিছুটা ফসলের ক্ষতি হলেও পরে আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে।এতে কৃষকের মন ভরছে ঠিকই।কিন্তু তা বেশিক্ষণ ধরে রাখা সম্ভব হবে না যশোরের কৃষকদের।কারণ উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।তবে কৃষক যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায়,তা নিশ্চিত করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে কৃষকরা।
যশোর কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,যশোর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো,১ লক্ষ ৬২ হাজার,৬শত ৩৭ হেক্টর।যা অর্জিত হয়েছে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ১শত ৪০ হেক্টর।যা লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি।যশোর জেলা ৮টি উপজেলা বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়েছে।সদর উপজেলা বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো ২৫ হাজার ৬ শত৫০ হেক্টর যা অর্জিত হয়েছে ২৬ হাজার ৩ শত হেক্টর।শার্শা উপজেলা লক্ষমাত্রা ছিলো ২২ হাজার ৬ শত,অর্জিত হয়েছে ২৩ হাজার ৪ শত ৫০ হেক্টর।ঝিকরগাছায় লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১৯ হাজার ৭ শত হেক্টর যা অর্জিত হয়েছে ১৮ হাজার ৯ শত হেক্টর।অভয়নগর উপজেলায় লক্ষমাত্রা ছিলো ১৪ হাজার হেক্টর,অর্জিত হয়েছে ১৪ হাজার ৩ শত ৫০ হেক্টর।বাঘারপাড়া উপজেলায় লক্ষমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার ৫ শত ২৭ হেক্টর,অর্জিত হয়েছে ১৬ হাজার ৭ শত ৩০ হেক্টর।মনিরামপুর উপজেলায় লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো ২৯ হাজার ১ শত ৬০ হেক্টর যা অর্জিত হয়েছে ২৯ হাজার ৯ শত হেক্টর।কেশবপুর উপজেলায় লক্ষমাত্রা ছিলো ১৮ হাজার ৫ শত হেক্টর,অর্জিত হয়েছে ১৫ হাজার ২ শত ১০ হেক্টর জমিতে।
মাঠপর্যায়ে খবর নিয়ে জানা গেছে,চলতি বছর বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করা হলেও কৃষকরা ধান বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন।কারণ সব ধরনের কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন,কৃষক যদি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় তাহলে সমস্যা নেই।কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গিয়ে বাজারে পণ্যের দাম বেশি পড়লেও সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে পড়বে।সে দিকটাও সরকারের বিবেচনায় রাখতে হবে।
যশোর সদর উপজেলা ফতেপুর গ্রামের কৃষক সোহাগ হোসেন জানান,তার প্রতি বিঘায় প্রায় ১৩ হাজার ৫০ টাকা খরচ হয়েছে।তিনি এবার ১০ বিঘা জমি চাষ করেছেন।তার হিসাবে, এক বিঘা জমিতে বীজ বাবদ খরচ হয়েছে চারশ ৫০ টাকা,জমি চাষ আটশ টাকা,ধানের চারা লাগানো বাবদ ১ হাজার টাকা,পানি সেচ দেয়া বাবদ এক হাজার ৫ শত টাকা,সার বাবদ চার হাজার,কীটনাশক বাবদ দুই হাজার টাকা,পরিচর্যা বাবদ এক হাজার টাকা এবং ধান কাটা বাবদ খরচ হবে দুই হাজার আটশ টাকা।তা ছাড়া নিজের পরিশ্রম তো আছেই।
মনিরামপুর উপজেলা হরিহরনগর এলাকার কৃষক হাফিজ মোড়ল জানান, তবে এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে।আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলন হবে।সে হিসেবে প্রতি বিঘায় ২২ থেকে ২৫ মন ধান হতে পারে।কিন্তু উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে চিন্তা এখন ও কাটেনি।এখন যে অবস্থা চাষাবাদ করে লাভ নাই। ধানের দাম পাচ্ছি না।এবার ও দাম নিয়ে শংশয় রয়েছে।
জেলার পুলেরহাট এলাকার হাতেম আলি পাইকার ধান ব্যবসায়ী তথ্যমতে,বর্তমানে ধান বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে সাড়ে ৭শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকা মণ।শুধুমাত্র নতুন ধান হিসেবে মিনিকেট ধান ৭শ থেকে ৭শ ৫০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।নাম কম থাকার কারণ বলতে প্রতি উত্তরে বলেন মিল মালিক ও ধান গুদামজাত করণ সিন্ধিকেটের কারণে এটা হয়।সরকার যদি এগুলো বন্ধ ও কৃষকের সার,বীজের দাম যদি কমাতে পারে তা হলে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারবে।এছাড়া অন্যান্য জাতের নতুন ধান বাজারে আসতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বলে এই ব্যবসায়ী জানান।
জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সেখ ইমদাদ হোসেন জানান,এ জেলায় ৮ উপজেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো,১ লক্ষ ৬২ হাজার,৬শত ৩৭ হেক্টর।যা অর্জিত হয়েছে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ১শত ৪০ হেক্টর।ধান পাকার মৌসুমে প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে আরো ভালো ফলন হতো।জাত ব্রি ধান ৪৭,ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ৬১ ও বিনা ধান ১০,ব্রি ধান ২৮ জাতের ধানের ফলন অন্য ফসলের চেয়ে ভালো হয়েছে।তা ছাড়া বোরো আবাদে ভালো ফলনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে প্রতিটি উপজেলার কৃষকদের মাঠ পর্যয়ে কিভাবে ভালো ফলন পাওয়া যায় সেকাজ গুলো করে আসছে।আর কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটার ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে।সরকারি নির্ধারিত দামে ও কৃষকরা সঠিক দাম পায় তা হলে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারবে।
সম্পাদকীয়,বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৩৮/১, আরামবাগ,মতিঝিল-ঢাকা-১০০০
যোগাযোগ: মোবাইল ০১৭১৩-৩৩২১৫৯- ০১৩১৮-৬৮০৩৮১
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম