লালমনিরহাট সংবাদদাতা :সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার ও আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রকৌশলীর অবহেলায় কাজ শেষ না করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন আদিতমারী-বুড়িরবাজারগামী ও মহিষখোচা বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা। সামান্য বৃষ্টিতে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে রাস্তাটি। দীর্ঘদিন যাবত রাস্তাটি মেরামত না করায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে লোকজনকে। ফলে সড়কটি সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসী ধানের চারা রোপন করে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের মহিষখোচা বাজার সংলগ্ন এলাকায় বেহাল সড়কে ধানের চারা রোপন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সেখানকার এলাকাবাসী ও সাধারন পথচারীরা।এদিকে এলাকাবাসী দ্রুত রাস্তাটি মেরামতের অভিযোগ দিলেও কর্ণপাত করছেন না উপজেলা প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) আমিনুর রহমান। উল্টো ঠিকাদারকে দায়ী করছেন তিনি।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় নষ্ট হওয়া সড়কগুলো সংস্কার করতে ফ্লাড ডিজাস্টার ড্যামেজ রুলার রোড ইনফ্লাকচার ফান্ড (এফডিডিআরআরআইএফ) প্রকল্পের আওতায় বরাদ্ধ দেয় সরকার। লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ১৭টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্ধ আসে গত অর্থবছরে। যা বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)।এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বুড়িরবাজার মহিষখোচা সংযোগ সড়কের ৫.০৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করতে বরাদ্ধ দেওয়া হয় ২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭২ টাকা।
যার মধ্যে বুড়িরবাজারে একশ মিটার ও মহিষখোচা বাজারে ৫শ মিটার আরসি ঢালাই ধরা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছেন স্থানীয় ঠিকাদার আব্দুল হাকিম। কিন্তু তার কাছ থেকে কমিশনে ক্রয় করে কাজ করছেন স্থানীয় ঠিকাদার ইকবাল হোসেন দাউদ।কাজটি শুরু থেকে স্থানীয়রা নিম্নমানের কাজের অভিযোগ করে এলেও কর্নপাত করেননি উপজেলা প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) আমিনুর রহমান। তিনি ঠিকাদার ইকবাল হোসেন দাউদের সাথে আতাত করে নিম্নমানে ইট, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করে দায়সারা কাজ করেন। সড়কের উভয় পাড়ে ৩ ফুট মাটি দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ফলে কাজ শেষ না হতেই ৫ কিলোমিটারের এ সড়কটির বেশ কিছু স্থানে ভেঙে গেছে।
সড়ক ডেবে গিয়ে গর্তেরও সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু স্থানে। জোড়াতালি দিয়ে সড়কটির সংস্কার করলেও করা হয়নি দুই বাজারে ৬ শ'মিটার আরসিসি ঢালাই। এতেই কাজ সমাপ্ত করে চলে যান ঠিকাদার।এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে শতকরা ৯৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে বিল পরিশোধ করেন। ফলে বাকী কাজ সমাপ্ত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে এবং ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েও করাতে পারছেন না প্রকৌশলী অধিদপ্তর।
আরসিসি ঢালাই না করায় দুই বাজারে যাতায়তকারীরা প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বিক্রিত পণ্য। নিম্নমানের ইট ও পুরাতন বিটুমিন মিশ্রিত খোয়া ব্যবহার করায় কাজ শেষ না হতেই বিভিন্ন স্থানে সড়কটি ডেবে গেছে বলে এলাকাবাসী দাবী করেন।চুক্তিপত্রের ঠিকাদার আব্দুল হাকিম বলেন, কাজটি ইকবাল হোসে দাউদের মাধ্যমে করছি। তবে এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন দাউদ কোন কথা বলতে রাজি হননি।উপজেলা প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) আমিনুর রহমান বলেন, ঠিকাদার কাজ না করলে আমার কি করার আছে। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে দাবী করেন।আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, জনগণের ভোগান্তি এড়াতে কাজটি দ্রুত করার জন্য বলা হয়েছে।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খাঁন বলেন,কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ কাজটি শুরু হবে এবিষয়ে তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি।