আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক।। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার তাসলিমা আক্তার (২৩) নামে এক স্কুলশিক্ষিকা নিহত হয়েছেন। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চৌরাস্তা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত তাসলিমা আক্তার চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কেরামতপুর গ্রামের মৃত নূর
রহমানের মেয়ে। তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজের পড়ালেখার পাশাপাশি উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব চরলক্ষ্মী আশ্রয়ণ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, আগামী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) তাসলিমা আক্তারের বিয়ের দিন ধার্য ছিল। মোটরসাইকেলযোগে নিজের বিয়ের কার্ড নিয়ে পাশের একটি স্কুলে দাওয়াত
দেয়ার জন্য যাওয়ার পথে চৌরাস্তা এলাকায় একটি কুকুরের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।চরজব্বর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুনঃপ্রশংসনীয় সব মানবীয় গুণাবলী নিয়ে বেড়ে উঠবে প্রতিটি মেয়ে। এই পৃথিবী যেন তার জন্য শ্বাপদসংকুল না হয়। তারা যেন জয় করতে পারে যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি। এমন মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে যুগোপযোগীভাবে এগিয়ে চলছে লৌহজং তীর ঘেষা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতেশ্বরী হোমস।নারী শিক্ষায় গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০২০ সালে শিক্ষা
ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২০ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করে।১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৪ জন ছাত্রী নিয়ে বিদ্যানিকেতনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পাশাপাশি
সহপাঠ্য কার্যক্রম দেশজুড়ে এমনকি দেশের বাইরেও সুপরিচিত। কালের পরিক্রমায় ৮২ বছর পর এবার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হলো প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তির তালিকায় ভারতেশ্বরী হোমসের নাম থাকায় কুমুদিনী পরিবারের পাশাপাশি মির্জাপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের
মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি একুশে পদক ও ২০০৫ সালে পরিচালক শ্রীমতি সাহা বেগম রোকেয়া পদক পান। গত বছর ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ভারতের
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ভারতেশ্বরী হোমস পরিদর্শন করেন। এছাড়াও প্রতি বছর দেশি-বিদেশি কুটনৈতিকরা ভারতেশ্বরী হোমস পরিদর্শনে আসেন।রাজধানী ঢাকা থেকে ৬৪ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ২৮ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে মির্জাপুর উপজেলা। রণদা প্রসাদ সাহা নারী শিক্ষার কথা চিন্তা করে নিজের প্রপিতামহী ভারতেশ্বরীর নামে ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতেশ্বরী বিদ্যাপীঠ। ওই সময় ১৪ জন ছাত্রী নিয়ে
মির্জাপুর গ্রামের মনমৎ পোদ্দারের বাড়িতে পাঠদান শুরু হয়। ১৯৪৫ সালে নাম পরিবর্তন করে ভারতেশ্বরী হোমস করা হয়। তদানীন্তন কালে শ্রীমতি ভারতেশ্বরী দেবী সুশিক্ষিত ও বিচক্ষণ বুদ্ধি সম্পন্ন নারী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তার দেখানো পথ অনুসরণ
করে নারী শিক্ষার প্রয়াস চালান রণদা প্রসাদ সাহা। পরম আরাধ্য প্রপিতামহীর স্মৃতি চির অম্লান করে রাখার জন্য ভারতেশ্বরী হোমস নামে ছাত্রীদের আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।প্রাচীন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ছাত্রীদের আবাসিক ব্যবস্থা। প্লে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে আবাসিক। প্রতিদিন
ছাত্রীরা রুটিন করে ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে দৈনিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিটি কাজের জন্য প্রতিটি শ্রেণি থেকে ৩০ জনের একটি দল তৈরি করা হয়। তারা দলগতভাবে থাকার ঘর, আঙ্গিনার নর্দমা সমূহ, নিজেদের ব্যবহৃত বাথরুম পরিস্কার, রান্নার কাজ নিজেরাই হোস্টেল কেয়ার টেকিং স্টাফদের সহযোগিতায় করে থাকেন।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীর সংখ্যা ৭৬৮ জন। এখানে পুরুষসহ ৫৬ জন শিক্ষক ও ৭৬ জন কর্মচারী রয়েছেন।ভারতেশ্বরী হোমস মির্জাপুর উপজেলা সদর দিয়ে প্রবাহিত লৌহজং নদীর তীর ঘেঁষা উত্তরপাশে বিশাল এলাকা নিয়ে অবস্থিত। চারপাশে বিশাল আকৃতির ভবন রয়েছে। মাঝে বিশাল মাঠ। মাঠের পশ্চিম-উত্তরপাশে পাশে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের নাম করা একটি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শৃঙ্খলা ও
নিয়মানুবর্তিতার জন্য ভারতেশ্বরী হোমসের নাম দেশজুড়ে সুবিদিত। ১৯৬২ সালে ভারতেশ্বরী হোমসে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা চালু করা হয়। ভারতেশ্বরী হোমস থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭৪ জন এসএসসি এবং ৩ হাজার ৪৪৮ জন এইচএসসি পাস করেছে।১৯৪৭ সালে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। দানবীর রণদা প্রসাদ
সাহা (আরপিসাহা) ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে ১৯৭১ সালের ৭ মে নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী কমপ্লেক্স থেকে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা ধরে নিয়ে যায়। আর ফিরে আসেননি তারা। সে সময় রণদা প্রসাদ সাহার দ্বিতীয় মেয়ে জয়া পতি কুমুদিনী ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ১৯৯৯ সাল
পর্যন্ত তিনি এই পদে কাজ করেছেন। বর্তমানে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রাজীব প্রসাদ সাহা। তিনি রণদা প্রসাদ সাহার নাতি, ভবানী প্রসাদ সাহার ছেলেগণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব গঠনে ভারতেশ্বরী হোমসে ছাত্রী সংসদ রয়েছে। প্রতি বছর ছাত্রী সংসদ নতুন করে গঠন করা
হয়। বিদ্যালয়টি ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৬২ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি খোলা হয়। স্বাধীনতার পরপরই উত্তপ্ত রাজনীতি ও উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ ১৯৮৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানে আবার উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খোলেন। প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী অনাবাসিক ৫ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আবাসিক। প্রতি বছর দশম শ্রেণি হতে এজিএস,
একাদশ শ্রেণি হতে জিএস এবং দ্বাদশ শ্রেণি হতে ভিপি নির্বাচিত করা হয়। জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচিতদের ডাক্তারি ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষে এখানে ভর্তি করা হয়। ছাত্রীনিবাসে প্রত্যেক ছাত্রীকে নিয়মাবলীর মধ্যে চলাফেরা করতে হয়।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ জাহাঙ্গীর আলম রাজু
হেড অফিস : প্রস্তাবিত (১ম তলা),৯৮, নয়াপল্টন,ঢাকা-১০০০
বানিজ্যিক এলাকা: বাইপাইল আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা।
মফস্বল কার্যালয়: মেইন রোড (২য় তলা),কেশবপুর,যশোর।
নিউজ-মেইল: dailyamaderbd24@gmail.com
নিউজ রুমঃ রাজু:- ০১৭১১-১৩৯৪২০
আমাদেরবাংলাদেশ. ডট কম