ঢাকা।। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিডকে কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় ইনিংসের মুমিনুলদের ব্যাটিং ব্যর্থতা পাকিস্তান দলকে ফিরিয়েছে ম্যাচে। তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে এসে ম্যাচটির দৃশ্যপটে পরিবর্তন এসেছে।
চতুর্থ দিনের পুরোটাই ব্যাটিং-বোলিংয়ে কর্তৃত্ব করেছে পাকিস্তান। গত ফেব্রুয়ারিতে জোড়া-তালি মার্কা দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৫ রানের ৩ উইকেট হাতে রেখে পাড়ি দিয়েছে ১২৭.৩ ওভারে)।
চতুর্থ ইনিংসে ২০২ রানের চ্যালেঞ্জটা সহজ করে ফেলেছে পাকিস্তানের ওপেনিং পার্টনারশিপ। ইতোমধ্যে আবিদ আলী-আবদুল্লাহ শফিকের অবিচ্ছিন্ন ওপেনিং পার্টনারশিপে এসেছে ১০৯ রান। জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার এখন ৯৩ রান। পঞ্চম দিনে টেনে নেয়া ম্যাচে অলৌকিক কিছু না হলে জয়ের আনুষ্ঠানিকতাই কেবল বাকি পাকিস্তানের।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের পড়ন্ত বেলায় পাকিস্তান পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদির স্পেলটি (৬-৪-৬-৩) বড় দুর্ভাবনায় ফেলেছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনেও তার একটা স্পেল (৪-১-১৪-২) বাংলাদেশের টেল এন্ড দিয়েছে কাঁপিয়ে।
দিনের প্রথম সেশন ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য আশাব্যঞ্জক। তাতে উল্টো পাকিস্তানকেও বড় পরীক্ষার মুখে ফেলেছিল মুমিনুলের দল। তবে লাঞ্চের পর দৃশ্যপটে পরিবর্তন হয়েছে। পাকিস্তান পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদির এক স্পেলে (৪-১-১৪-২) ধাক্কাটা খেয়েছে বাংলাদেশ দল।
লাঞ্চের পর ৫৪ মিনিটে স্কোর শিটে ৪২ রান যোগ করে বাংলাদেশ হারিয়েছে শেষ ৪ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ থেমেছে ১৫৭-তে। চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তানকে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ ২০২ রানের চ্যালেঞ্জ।
তৃতীয় দিনের পড়ন্ত বেলায় বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে ছিল শঙ্কার আলামত। ওই দিন স্কোর শিটের চেহারা ৩৯/৪-এ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনটা ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জের পরীক্ষা ভালই দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ১১৫/৬। চতুর্থ দিনের প্রথম দুই ঘন্টায় বাংলাদেশ যোগ করেছে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৬ রান।তবে লাঞ্চের পরের ঘন্টায় এসে এলোমেলো হয়েছে বাংলাদেশ দল।
দিনের তৃতীয় বলে মুশফিক হাসান আলীর বল ছাড়তে যেয়ে বোল্ড হয়ে (৩৩ বলে ১৬) দলকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ইয়াসির আলী রাব্বী-লিটনের দারুণ বোঝাপড়ায় কেটে যাচ্ছিল শঙ্কা। টেস্ট অভিষেক ইনিংসে ৪ রানে ফিরে হতাশ করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ইয়াসিরের দায়িত্বশীল ব্যাটিং পেয়েছে বাহাবা। তবে ফিফটির পথে যখন এগুচ্ছেন, তখন দূর্ঘটনা ঘটেছে।
শাহীন শাহ আফ্রিদির শর্ট বলে মুখ বাঁচাতে যেয়ে পারেননি। হেলমেটের পেছনে প্রচন্ড জোরে আঘাত লেগেছে। ২৯.৫ ওভারে আঘাত পেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পর এক ওভার ছিলেন মাঠে। নোমান আলীর বলে সিঙ্গলও নিয়েছেন। তবে ব্যাথা বেড়ে যাওয়ায় আর মাঠে থাকতে পারেননি। মাঠ থেকে কাছাকাছি থাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালে তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। শঙ্কা কেটে গেলেও তাকে ২৪ ঘন্টার জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে বিসিবির মিডিয়া জানিয়েছে।
ইয়াসির আলী যখন মাঠ ছেড়ে গেছেন, তখন তার সংগ্রহ ৭২ বলে ৩৬। ৬টি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি এই ইনিংসে। যার মধ্যে শাহীন শাহ আফ্রিদির ইয়র্কার ডেলিভারিতে ফ্লিক শটে বাউন্ডারিটি ছিল দর্শনীয়। লিটনের সাথে ৪৭ রানের পার্টনারশিপটিও ছিল দারুণ প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত। লাঞ্চের মিনিট দশেক আগে ফিরে গেছেন মিরাজ। অফ স্পিনার সাজিদ খানের ইয়র্কারে মিরাজ হয়েছেন এলবিডাব্লুউ। আম্পায়ার গফ-এর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে লাভ হয়নি। রিভিউ নষ্ঠ করেছেন মিরাজ (৪৪ বলে ১ চার এ ১১)।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ইয়াসির আলী রাব্বীর জায়গায় কনকাশন সাব হিসেবে নূরুল হাসান সোহান ভালই দায়িত্ব পালন করছিলেন। লিটনের সাথে ৬৩ রানের পার্টনারশিপে রেখেছেন অবদান। তবে সাজিদ খানের বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে (৩৩ বলে ১৫) দলের বিপদ ডেকে এনেছেন। অফ স্পিনার সাজিদ খান এই ব্রেক থ্রু দিলে হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ৪ রানে পড়েছে ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লিটন শাহীন শাহ আফ্রিদিকে ডিপ পয়েন্টে সিঙ্গল নিয়ে পূর্ণ করেছেন হাফ সেঞ্চুরি।
১৫০ মিনিটে হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসে মেরেছেন ৬টি বাউন্ডারি। শাহীন শাহ আফ্রিদির সুইং ডেলিভারিতে ক্রস খেলতে যেয়ে আম্পায়ার্স কলে এলবিডাব্লুউতে থেমেছেন লিটন (৫৯)। সেই ওভারে ২ বল পরে রাহি উইকেটের পেছনে দিয়েছেন ক্যাচ (০)। সাজিদকে হাফ পিচে খেলতে যেয়ে তাইজুল থেমেছেন স্ট্যাম্পিংয়ে কাঁটা পড়ে।
প্রথম ইনিংসে পেসার হাসান আলী বাংলাদেশ ব্যাটারদের উপর ঘুরিয়েছেন ছড়ি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটনটা তুলে দিয়েছেন তিনি শাহীন শাহ আফ্রিদিকে। আফ্রিদি টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪র্থ বারের মতো দেখেছেন ইনিংসে ৫ উইকেটের মুখ (৫/৩২)। এ বছরটা টেস্টে দারুণ কাটছে এই দীর্ঘদেহী পেসারের। ৮ টেস্টে ৪৪ উইকেটে বিস্ময় ছড়িয়েছেন তিনি।
চতুর্থ দিনে পাকিস্তান ওপেনিং জুটি একটা রেকর্ডও করেছে। এর আগে টেস্টে উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ শুধু ছিল একবারই। ২০০৩ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লাহোরে। সেই ম্যাচে উভয় ইনিংসে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটির সংগ্রহ ছিল ২৪৩। চট্টগ্রাম টেস্টে সেখানে ওপেনিং পার্টনারশিপ উভয় ইনিংস মিলে করেছে ২৫৫ রান। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলী দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৬ রানে এবং টেস্ট অভিষেকে উভয় ইনিংসে (৫২ও ৫৩*) ফিফটি করেছেন আবদুল্লাহ শফিক। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩ ওভারের মধ্যে ১৬ ওভার একাই বল করেছেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল।