ঢাকা।। করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশেও ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের তালিকা। প্রাণঘাতী এই রোগের মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যরা।
নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এই সম্মুখ যোদ্ধাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব যেন বেড়েছে কয়েকগুণ। নিজে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সংক্রমিত এলাকা লকডাউন, ত্রাণ বিতরণ, জরুরি সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখাসহ নানাবিধ দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। এক কথায় করোনা সংকটের মধ্যে নিজেদের নতুন করে পরিচিত করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। আর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে পুলিশের ৬৫ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। এদিকে, সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় প্রায় ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, মোট আক্রান্তদের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত সদস্য রয়েছেন ২৯ জন। পূর্বে আক্রান্ত ছিলেন ২৬ জন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৩ জন।
জানা গেছে, বর্তমানে পুলিশের ৬২৬ সদস্য কোয়ারেন্টিনে আছেন। এদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৪৩ জন এবং আইসোলেশনে আছেন ৯ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দুই থানার সব পুলিশ সদস্যকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ডিএমপি গোয়েন্দা পুলিশের ১ জন আক্রান্ত হওয়ার পর ২২ জনকে পাঠানো হয়েছে কোয়ারেন্টিনে। ডিএমপি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ের একজন কর্মচারী আক্রান্ত হওয়ার পর ছয় কর্মকর্তা কোয়ারেন্টিনে গেছেন।
রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাকে ও পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) দুই সদস্য আক্রান্তের পর তাদের সংস্পর্শে থাকা সদস্যদেরও কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনস ব্যারাকে ১ জন আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যারাকে থাকা ২০০ পুলিশ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে যাওয়া ১ পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা রোগীর সবচেয়ে বেশি সরাসরি সংস্পর্শে আসতে হয় চিকিৎসকদের। তার পরই রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা যায়নি। আবার দায়িত্ব পালনের সময় ‘অসাবধানতাবশত’ সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসেও অনেক পুলিশ সদস্য সংক্রমিত হয়েছেন। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, আইইডিসিআরের নিয়ম অনুসরণ করে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে করোনার স্পেশালাইজড হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে-এমন পুলিশ সদস্যদের আলাদা করে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, প্রথম দিন থেকেই পুলিশ সদস্যদের নানাভাবে ব্রিফ করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে। আমরা প্রতিটি ইউনিটে হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিয়েছি, যেন প্রয়োজনে যেকোনো সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা যায়।