ওবাইদুল ইসলাম গাইবান্ধা :
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষার অন্যতম অনুষঙ্গ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন। গাইবান্ধা সদর উপজেলার হরিণ সিংহা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ । ফলে বাধ্য হয়ে নানা সমস্যায় জর্জড়িত পুরাতন ভবনে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে লেখাপড়াসহ নানা রকম সমস্যায় ভুগছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। কতৃপক্ষ বলছেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনের কাজ সম্পন্ন হবে।
৩২৩ প্রকল্পের বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধা জেলায় ৫০টি হাই স্কুলে চারতলা ভবন নির্মাণে কাজ শুরু করেন জেলা শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে । এই
প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালে ২ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানের বরাদ্ধ পায় গাইবান্ধা সদরের রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের হরিণ সিংহা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। উদ্বোধনের দেড় বছরের মধ্যে ভবন নির্মানের কাজ সম্পূর্ণ করার কথা থাকলেও ৫বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সম্পূর্ণ হয়নি কাজ। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই নানা সমস্যায় জর্জড়িত পুরাতন ভবনে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে লেখাপড়াসহ নানা রকম সমস্যায় ভুগছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। পাঠদানে হিমসিম খেতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ না থাকায় গাদাগাদি করে বসে লেখাপড়া করছেন বিদ্যালয়ের কমলমতি শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তারা।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আখি আক্তার জানান, আমরা যখন প্রথম ষষ্ঠ শ্রেণীতে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন এই নতুন ভবন এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু ৫ বছর পেরিয়ে এখন আমরা দশম শ্রেণির উঠলেও এখন পর্যন্ত ভবনটির কাজ সম্পন্ন হয়নি। আমাদের দাবি আমরা এই বিদ্যালয় থাকাকালীন সময়ের মধ্যেই ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হোক যাতে আমরা ওই নতুন ভবনে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
নবম শ্রেণীর ছাত্র শিহাব উদ্দিন জানান, আমাদের বিদ্যালয় প্রায় সাড়ে ছয়শ শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের সকলকে একটিমাত্র বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। শুধু তাই নয় শিক্ষকরাও এই একটি বাথরুমি ব্যবহার করেন। ফলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তৌফিক আল মাহমুদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলায় আমাদের খেলার মাঠে ভবন নির্মাণের ইট, বালি, কাঠের, ইটের টুকরো, যত-তত্ত্বভাবে পানি পড়ে থাকায় আমরা স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করতে পারছি না ।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শ্রাবণ জানান, আমাদের শ্রেণীতে ১২০ জন শিক্ষার্থী, আমাদের শ্রেণী কক্ষটি ছোট হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে গাদাগাদি করে এক বেঞ্চে ৬/৭ জন করে বসতে হয় শুধু তাই নয় অনেক সময় আমাদের দাঁড়িয়েও ক্লাস করতে হয় ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজাহার আলী জানান, নতুন ভবন নির্মিত হওয়ায় পুরাতন ভবনগুলো সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘ সময় ধরে কাজটি না হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। দ্রুত এই ভবনের কাজটি সম্পন্ন করা হক এমনটা দাবি তার।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুস আলী বিল্ডার্স এর স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার ইউনুস আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ইনশাআল্লাহ তিন মাসের মধ্যে ভবন নির্মানের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এবং দীর্ঘ সমযয়েও কাজ সম্পূর্ণ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথম যখন ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু করা হয় তখন ফাউন্ডেশন এর নিচ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পানি আশায় কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল এবং করোনার কারণেও দুই বছর কাজ বন্ধ ছিল এজন্যই সঠিক সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যায়নি।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদ জানান, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সেই সাথে নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত সময় নেয়ায় ঠিকাদারের ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
দ্রুত হরিণ সিংহা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল সমস্যার সমাধান হবে এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।