নিজস্ব প্রতিবেদক।। সাড়া পৃথিবী জুড়েই চলছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এই মরনব্যাধিতে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পরেছে। সাধারন ছুটি ঘোষনার পর থেকেই সমাজের দরিদ্র জনগোষ্টির জন্য ত্রান বিতরণের জন্য সকলে একযোগে এগিয়ে আসে। এর মধ্যে কেউ সাংগাঠনিকভাবে কেউ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। সাধারণ ছুটির পরপরই মানুষের কাছে এসব ত্রান দেয়ার কারনে খুব বেশি কাউকে কষ্ট করে থাকতে হয়নি। সাধারণ ছুটি চলছে প্রায় একমাসের বেশি। এর মধ্যে দেয়া হয়ে গেছে অনেকের ব্যাক্তিগত ফান্ড থেকে ত্রান। অথচ এই একমাসে ত্রান না দিয়ে এখন থেকে ত্রানের বিতরণ শুরু করলে দরিদ্র মানুষের জন্য ভাল হতো বলে মনে করেন অনেকে।
‘অভাবের আগেই ত্রান বিতরণ, বিপর্যয়ের মুখে দারিদ্র’ বিষয়ক পুর্বনির্ধারিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব প্রসঙ্গ তুলে ধরেন বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের (বনেক) নেতৃবৃন্দ। বুধবার (০৬ মে) রাত ১০ টায় অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা দেশের সার্বিক অবস্থার উপর আলোকপাত করেন।
এসময় বক্তারা বলেন, বিগত সময় মানুষ ঈদ, কিংবা কোরবানিতে ১২ থেকে ১৫ দিন এমনিতেই সাধারণ ছুটি পেয়ে থাকে। সেময় মানুষ গ্রামে চলে যায় প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করে। আবার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে আসে। সাধারণ দৃষ্টিকোন থেকে সবারই ১৫ থেকে ১ মাস চলার মত অবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে করোনার প্রভাবে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ত্রান বিতরণ শুরু করাটা ঠিক হয়নি। যার কারনে এখন ত্রানের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
লোক দেখানো কিংবা নিজেকে ফোকাস করার প্রত্যয় নিয়ে অনেকে দ্রুত করে ত্রান বিতরণ করেন। যার কারণে অনেক সময় সঠিক ব্যাক্তি ত্রান পায়নি।
ত্রান বিতরণে প্রশাসনের সাথে সংগঠন কিংবা ব্যাক্তির সমন্নয়ের অভাব বলে মনে করেন আলোচকরা। তারা বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষনার পরপরই মানুষ ত্রান বিতরণ শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে ত্রান দেয়ায় অনেকে একাধিকবার ত্রান পেয়েছেন আবার অনেকে ত্রান একেবারেই পাননি।
আলোচনায় সভায় পুলিশের ভূয়োসী প্রশংসা করা হয়। এই ক্রান্তিকাল মুহুর্তে অন্যরকম এক পুলিশ বাহিনী মানুষ দেখেছে বলে মন্তব্য করেন আলোচকরা।
অভাবের আগেই ত্রান পেয়ে যাওয়ায় সামনের দিনগুলো হতদরিদ্রের জন্য দুর্ভোগের দিন হয়ে আসতে পারে বলে মনে করেন আলোচকরা। এসময় তারা বলেন, সমন্নহিনতার অভাব আর অব্যবস্থপনার কারনে অনেক হতদরিদ্র মানুষ ত্রান পায়নি।
তবে এসময় সবাই সরকারের প্রশংসা করেন। দেশের এই ক্রান্তিকালে সরকার যেভাবে মানুষের পাশে দাড়িয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার বলে মনে করেন নেতৃবৃন্দ ।
সামনের দিনগুলোতে ত্রান বিতরণের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন সংগঠনটির উপদেষ্টা ও দৈনিক আমাদের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মেয়াজী সেলিম আহমেদ। তিনি বলেন, যেহেতু প্রাথমিক পর্যায় ত্রান নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে সেহেতু এসব সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য ত্রান বিতরণে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের (বনেক) অনলাইন আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহন করেন সংগঠনটির উপদেষ্টা ও দৈনিক আমাদের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মেয়াজী সেলিম আহমেদ, সভাপতি খায়রুল আলম রফিক, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আসাদ, প্রচার সম্পাদক নাহিদুর রহমান বিদুৎ, দপ্তর সম্পাদক এইচ এম এ তারেক ভূঞা, যুগ্ন সম্পাদক জাকির হোসেন বাচ্চু ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা জিন্নাতুল নাহার।
উল্লেখ্য, প্রতিনিয়তই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছুটি বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল করা হয়। ছুটি তৃতীয় দফা বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর চতুর্থ দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। পঞ্চম দফায় ৫ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। এরপর গত শনিবার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চলমান সাধারণ ছুটির মেয়াদ ১৫ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সাধারণ ছুটি ঘোষনার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে দরিদ্রদের জন্য ত্রান পৌছে দেয়ার ঘোষনা দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংগাঠনিক সংগঠন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রান বিতরন করা হয়। ত্রান বিতরনে পিছিয়ে থাকেনি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সহ আরো অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনী।
সরকারি হিসেবে দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার পর্যন্ত এক লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে এবং বিতরণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৩৪১ মেট্রিক টন। বিতরণকৃত চালে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৯৩ লাখ ৩৮ হাজার এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা ৩ কোটি ৯৫ লাখ জন।