আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক।।১৯৭২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকায় জন্ম নেওয়া টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় এই অভিনয়শিল্পীর গ্রামের বাড়ি বরিশাল। যিনি একুশ শতাব্দীর প্রথম দশকে টেলিভিশনের পর্দায় ব্যতিক্রমী ও শক্তিশালী অভিনয়শিল্পী হিসাবে আবির্ভূত হন।
মোশাররফ করিম অভিনয়ের পদচারণ শুরু হয় থিয়েটার মঞ্চে। এসএসসি পাস করে ১৯৮৬ সালে ঢাকায় এসে নাম লিখিয়েছিলেন নাট্যকেন্দ্রে। তার ১৯৯৯ সালে এক পর্বের নাটক অতিথি-এ অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় আগমন করেন। যদিও তখন তিনি বেশ কিছু নাটকে ছোট ছোট কিছু চরিত্র অভিনয় করেছেন। তবে নাটকে তার সত্যিকার পথচলা শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকে। ২০০৪ সালে তিনি দুটি নাটকে অভিনয় করেন, যা অভিনয় জগতে তাকে এক অধ্যাবসায়ী চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ছোটপর্দায় ক্যারাম নাটকের পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৮ সালে তিনি দেয়াল আলমারি নাটকে অভিনয় করেন। এই নাটকের জন্য তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচক শাখায় সেরা টিভি অভিনয়শিল্পী (পুরুষ) বিভাগে পুরস্কৃত হন।
ওয়ান এলিভেনের সময় প্রচারিত রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রহনন করে রুপক নির্মান মোস্তফা সারুয়ার ফারুকীর ৪২০ নাটকে মন্টু চরিত্রের মোশারফ করিমের অভিনয় সর্বমহলে করে দ্যুতি ছড়ায়। সালাউদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক ‘ভবের হাট’ নাটকে অভিনয় করে দারুণ দর্শক প্রিয়তা পান। পিক পকেট, লস প্রজেক্ট থেকে শুরু করে এফ এন এফ, হাউজফুলসহ বহু ধারাবাহিকে সমান সাবলীল মোশাররফ করিমকে সবিস্ময়ে আবিষ্কার করেছেন এ দেশের ছোটপর্দার দর্শক। এক ঘন্টার নাটক, টেলিফিল্ম আর ধারাবাহিকে বাংলা নাটকের ভরসার নাম হয় উঠেন তিনি। এখন পর্যন্ত প্রায় পাচঁশোর অধিক নাটকে অভিনয় করেছেন।
‘জয়যাত্রা’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। ২০০৬ সালে তৌকীর আহমেদের ‘রূপকথার গল্পে’ একটি অতিথি চরিত্রে কাজ করেন। এই চলচ্চিত্রে তিনি একজন পকেটমার চরিত্রে অভিনয় করেন। পরের বছর জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত দারুচিনি দ্বীপ-এ অভিনয় করেন। এই ছায়াছবিটিও পরিচালনা করেছেন তৌকির আহমেদ।
২০০৯ সালে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছায়াছবিতে নুসরাত ইমরোজ তিশার বিপরীতে অভিনয় করেন। ২০১১ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত প্রজাপতি ছায়াছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন।এই ছায়াছবিতে তিনি মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত টেলিভিশন ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন।
পরবর্তীতে তিনি অভিনয় করেন আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত আলোচিত চলচ্চিত্র জালালের গল্প-এ। চলচ্চিত্রটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১৫ সালে এই চলচ্চিত্রে জালালের বড় ভাই চরিত্রে অভিনয় করে তিনি আভাঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসবের ১৯তম আসরে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।
তার অভিনীত নূর ইমরান মিঠু পরিচালিত কমলা রকেট চলচিত্রটি ঐতিহ্যবাহী গোয়াতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবের ৪৯তম আয়োজনে প্রদর্শিত হয়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ কৌতুকাভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হন, কিন্তু তিনি চরিত্রটি কৌতুক চরিত্র নয় দাবী করে এই পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেন।
বয়স ৪৮ হলে বুড়ো হয়ে যান নি কমেনি একটু অভিনয়ের ধার। এবারের ঈদে নির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু পরিচালিত ব্যতিক্রমধর্মী নাটক ‘বোধ’ এর চেয়ারম্যান চরিত্র করে আছেন আলোচনার তুঙ্গে। শুভ জন্মদিন মোশারফ করিম।
আমাদেরবাংলাদেশ/আরাফাত