আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক: বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর একে একে বেরিয়ে আসছে বুয়েটের বিভিন্ন হলের নানা কালো সত্য। জানা গেছে, বুয়েটের হলগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। তুচ্ছ কারণেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করতো তারা। এমনকি সালাম না দেওয়ার অজুহাতেও পেটানো হত সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এছাড়া র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন তো ছিলই। আর এইসব কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করতো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, এসব কক্ষ টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। তিনটি হলের সাতটি কক্ষ টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে কারও ডাক পড়লেই ধরে নেয়া হত তার কপালে আজ খারাপ আছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেও নির্যাতন সহ্য করতে হত। এই কারণে সবসময় উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হত সাধারণ শিক্ষার্থীদের। বুয়েটের একাধিক হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ‘বুয়েটের হলে হলে নিয়মিতই নির্যাতন চলে। আর এ কাজে ব্যবহারের জন্য স্টাম্প ও লাঠি প্রস্তুত রাখে ছাত্রলীগ। বুয়েটের আটটি হলের মধ্যে তিনটি হলের সাতটি টর্চার সেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই পরিচিত।
এসব কক্ষে শিক্ষার্থীদের ডাক পড়লে ধরেই নেওয়া হয় তিনি মার খেতে যাচ্ছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁর ওপরও চলে নির্যাতন। ফলে বুয়েটে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ভয়ের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল।’ জানা যায়, শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষটি (যে হলে আবরারকে হত্যা করা হয়) টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ছিল। এই কক্ষে থাকতেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া আহসানুল্লাহ হলের ৩২০, ৩২১, ৩২২ ও কাজী নজরুল হলের ২০৫ ও ৩১২ নম্বর কক্ষ নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হত।
গত একমাসেই এমন ৮-১০ টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যার বেশির ভাগই শিবির সন্দেহে পিটুনি। কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে মারধর করা হত। এছাড়া সালাম না দেয়া, ডাইনিং ও টিভি রুমে নেতারা আসলে তাদের দেখে সিট ছেড়ে না দেয়া এসব ছোটখাট বিষয় তো আছেই। গত ৩ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের ২০২ নমর কক্ষে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এহতেশামকে মারধর করা হয়। এরপর তাকে এক কাপড়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়।
তার কোন জিনিসপত্র নিতে দেয়া হয়নি। গত ২৭ জুন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অভিজিৎ করের। অভিজিৎ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এই নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা করেন। ফেসবুকে অভিজিৎ লেখেন, ২৭ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে আহসানউল্লাহ হলের ২০৫ নম্বর রুমে তাঁকেসহ প্রথম বর্ষের বেশ কয়েকজনকে ডেকে আনা হয়। তারপর এক এক করে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাঁদের মারধর করা হয়। এর মধ্যে দাড়ি রাখার জন্য একজনকে কষে থাপ্পড় মারা হয়।
জ্যেষ্ঠ ছাত্রকে সালাম না দেওয়ার কারণে আরেকজনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর অভিজিৎ করকে চুল লম্বা রাখার কারণে থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে আরো মারধরও করা হয়। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যেখানে ভিন্নমত পোষণ করলেই বার ছাত্রলীগের নির্দেশনার বাইরে কথা বললেই নানা অজুহাতে মারধর করা হত সাধারণ শিক্ষার্থীদের। পরে তা শিবির বলে চালিয়ে দেয়া হত।