নাম লাবনী। বয়স মাত্র ১৯ বছর। তার থাকার পাশের রুমে আরো পাঁচ জন মেয়ের বসবাস। পর্দায় ঘেরা ছোট ছোট রুমগুলো।কোনো এক রুম থেকে ভেসে আসছে গান। দুঃখ ভুলতে পান করছে গৃহে বানানো প্লাস্টিকের বোতলে রাখা ম*দ। আর পুরুষরা খুঁজে ফিরছে পছন্দ মতো মেয়েদের।এটা আসলে একটি যৌ*নপল্লী। এখানে গত পাঁচ বছর ধরে বসবাস করছে লাবনী। মাত্র দশ মিনিট সঙ্গ দিয়ে আয় করেন চারশো টাকা। যদিও এই টাকার বেশির ভাগ অংশই যায় যৌ*নপল্লীর মালিকদের পকেটে।এখানে আসার আগে অন্য দশটা মেয়ের মতো সাধারণ জীবন ছিল লাবনীর। বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। মাত্র ছয় মাসের শিশু সন্তানকে ফেলে গার্মেন্টসের কাজের খোঁজে ঢাকায় আসেন। একদিন ঢাকার রেললাইনে বসে কা*ন্নার সময় পরিচয় হয় এক মহিলার সাথে। সেই মহিলা তাকে একরাতে থাকার জায়গাসহ খাবারের ব্যবস্থা করেন। দুইদিন পরে ওই মহিলা মাত্র ১৭ হাজার টাকায় যৌ*নপল্লীতে বিক্রি করে দেয় লাবনীকে।
তখন লাবনীর বয়স ১৩ বছর। তাকে কেনার জন্য যৌ*নপল্লীর ম্যাডামের দেওয়া টাকা ফেরত না দিতে পারলে ওই নরক থেকে মুক্তি নেই তার। লাবনী এখন সেখানে রাতের ছুকরি নামে পরিচিত। বিক্রি হওয়া পর আ***ে রেখে একদিনেই কয়েকবার ধ*র্ষণের শিকার হন যৌ*ন কাজে নিয়োজিত প্রায় দশ হাজার অল্পবয়সী নারী। বাংলাদেশের যৌ*নপল্লীর এমন চিত্র ওঠে এসেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দি গার্ডিয়ানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে।লাবনী বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে যখন যৌ*নপল্লীতে আসে, তখন পুলিশকে ঘুষ দিয়ে যৌ*নকর্মী হিসেবে রেজিস্টার্ড করা হয়। এবং পুলিশের কাছে আমাকে বলতে বাধ্য করা হয় ওই ম্যাডামের কাছ থেকে আমি ৮০ হাজার টাকায় ঋণ নিয়েছি। এরপর আমার ফোনও কেড়ে নেয়া হয়। আমাকে একটি রুমে আ***ে রাখা হয়। আমি পালানোর চেষ্টা করলে আমাকে মে*রে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয় ওই ম্যাডাম। দুই/তিন মাস পর থেকে আমি পালানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে দেই। ’
লাবনীর মতো হাজারো নারীর জীবনের কেড়ে নেওয়া গল্প নিয়ে যৌ*নপল্লীর মালিকরা সাজায় তাদের চমকপ্রদ বিলাসী জীবন। গত পাঁচ বছরে প্রতি মাসে লাবনী তার ম্যাডামকে খাবার, পোশাক বাবদ ৩ হাজার ৫’শ টাকা করে দিয়ে আসছে। আর তার ঋণের প্রায় ৫০ গুন বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। গতবছর তার ঋণ শোধ হয়েছে। তারপরও লজ্জায়-ঘৃণায়-ভয়ে এখান থেকে বের হওয়ার মতো মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।লাবনী বলেন, আমি এতটায় হতভাগ্য যে আমি আমার মেয়ের কাছে মায়ের দাবি নিয়ে দাঁড়াতে পারিনি। মেয়েটা এখনো জানে না আমিই ওর মা।
ময়মনসিংহ যৌ*নপল্লীতে পাঁচ বছর ধরে কাজ করা লাবনীর জীবনের গল্প এখানে আসার পর থেমে গেছে। ভুলে গেছে এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে। লাবনীর অনেক খরিদ্দার তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। এখন তার চোখ মুখে শুধুই বিষণ্ণতার ছাপ। লাবনী এখন বলতে পারে না প্রতিদিন তার কাছে কয়জন খরিদ্দার আসে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় তার কাজ। প্রতি ঘণ্টায় একজন করে খরিদ্দার আসে লাবনীর কাছে।বর্তমানে ১৯ বছর বয়সের লাবনী বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি ঘুম থেকে ওঠে চিন্তা করি, কেন আমি এখনো মা*রা যাই না তা বুঝি না। আমি আমার জীবন থেকে মুক্তি চাই।’
লাবনীর চার রুম পর থাকা ফরিদা (৩৩) বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি এই যৌনপল্লীতে রয়েছেন। প্রতিনিয়ত এখানে মেয়ে পাচারের সংখ্যা বাড়ছে। সেই ১২ বছর ধরে যৌ*নকর্মী থাকার পর এখন মেয়ে কেনা বেচার সঙ্গে জড়িত। প্রথম একটি মেয়ে কেনেন মাত্র ১৩ হাজার টাকার বিনিময়ে। পুলিশকে ২ হাজার টাকা ঘুষ দিলে সরকারের রেজিস্টার্ডের সকল কাগজপত্র ঠিক করে দেয়। তবে এখন পুলিশের চার্জ বেড়েছে। এখন তার হাতে দুই মেয়ে আছে। তারা দুজনে প্রতি সপ্তাহে আমাকে প্রায় ১৮ হাজার টাকা উপার্জন করে দেয়।তবে এ যৌ*নপল্লীতে লাবনী, ফরিদার মতো কাজ করা প্রায় ৭’শ থেকে এক হাজার নারীই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌ*নকর্মীর কাজ করে যাচ্ছেন। ময়মনসিংহ যৌ*নপল্লীতে কাজ করা কর্মীদের মৃ***র পরে সাধারণ কবরস্থানে তাদের জায়গা হয় না। যৌ*নপল্লীর নিজস্ব কবরস্থান না থাকায় কেউ মা*রা গেলে রাতের অন্ধকারে দূরে কোথাও অজ্ঞাত ম*রদেহ বলে কবর দেওয়া হয়।
১৯৭৭ সাল থেকে ঢাকা থেকে অন্তত ১’শ কিলোমিটার দূরে দৌলদিয়া যৌ*নপল্লীতে কাজ করেন শিল্পি (৫৭)। তিনি বলেন, এখানে প্রতি মাসেই একজনের মৃ*** হয়। মৃ***র পর এখানকার ১২ জনের একটি দল আছে তারাই অল্প কিছু আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শেষকৃত্য করে দেয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ১’শ মেয়ের শেষকৃত্য তিনি দেখেছেন। সাধারণ কবরস্থানে তাদের কবর দেয়ার অনুমতি না থাকায় মাঝে মাঝে তারা ম*রদেহের গলায় পাথর বেঁধে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।শিল্পি বলেন, আম*রা এখানে যারা কাজ করি তারা সমাজের চোখে খারাপ। যদি একজন নারী আত্মহ*** করে তাহলে এটাকে এই ভেবে সবাই ভালোভাবে নেয়, যে আম*রা খুব দ্রুত নরকে যেতে পারবো।
২০০০ সালে পতিতাবৃত্তিকে বাংলাদেশে বৈধতা দেয়া হয়। কিন্তু এই পেশায় পাচার এবং বাধ্য শ্রম অবৈধ। আইনের প্রয়োগের অভাবে দেখা যায় বাংলাদেশে এই পেশায় কাজ করা প্রায় ৯০ শতাংশ ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসেছেন। তাদের বেশির ভাগ পরিবারের সদস্য অথবা স্বামীর দ্বারা বিক্রি হওয়ার পর এই পেশায় এসেছে। সরকারি হিসেব মতে বাংলাদেশে যৌ*ন পেশায় নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা লক্ষাধিক।-চ্যানেল আই অনলাইন।