পরিবারের কেউই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও শান্ত ছেলে শামীম বিল্লাহ বুয়েটে পড়তে এসে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পরিবার ও স্থানীয়দের কাছে তার রাজনীতিতে জড়ানো, সেই সঙ্গে আবরার হত্যা মামলায় জড়িত থাকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ছাত্রলীগের নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ৬ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ (২১) নিহত হন। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটির ১৪ নম্বর আসামি হলেন শামীম।
ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সবুর কাগুজি জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ইছাকুড় গ্রামের বাসচালক বাবা আমিনুর রহমান বাবলুর বড় ছেলে শামীম এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। এরপর তিনি বুয়েটের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন।
গত শুক্রবার বিকেলে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শামীম বিল্লাহকে শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের খানপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
ইউপি সদস্য সবুর কাগুজি বলেন, ‘শামীমের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। সব মিলিয়ে পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে তাদের। তবে শামীম ছোটবেলা থেকেই ছিল অত্যন্ত মেধাবী। বাবা বাসচালক। তারা দুই ভাইবোন। তার ছোট বোন শ্যামনগর মহসিন ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী।’
ইউপি সদস্য জানান, শামীম বিল্লাহ ঢাকায় দুটি টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। পারিবারিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালাতেন। সপ্তাহ খানেক আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনেছে শামীম। ছোটবেলা থেকে খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল এই শামীম। কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি। তার পরিবার রাজনীতির সঙ্গে সেভাবে জড়িত না থাকলেও শামীম বুয়েটে গিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
সরেজমিনে শামীমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার গ্রেপ্তারের পর মা সালিমা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বেশ কয়েকবার অচেতন হয়ে গেছেন। তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বাবা আমিনুর রহমান বাবলু বাড়িতে নেই। তার ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
শামীমের দাদা আতিয়ার রহমান সরদার বলেন, ‘আমাদের পরিবারের কেউ রাজনীতি করে না। শামীম বুয়েটের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত ৯ তারিখে রাতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে শামীম। বুয়েটে ছাত্রলীগের বড় ভাইদের সঙ্গে মিশতো সে।’
আতিয়ার রহমান সরদারের দাবি, ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা আবরারকে মেরেছে। শামীমকে ডেকে নিয়েছিল। শামীম আবরারের মৃহদেহ ধরেছিল, কিন্তু ওকে মারেনি।
শামীমের দাদা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তি আমিও চাই। একই সাথে এটাও চাই যেন নিরাপরাধ কেউ শাস্তি না পায়।’
গ্রেপ্তার শামীম বিল্লাহ্’র বিষয়ে শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনিসুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘গত শুক্রবার বিকেলে শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের খানপুর গ্রাম থেকে আবরার হত্যা মামলার আসামি শামীম বিল্লাহকে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। আটকের পরই তাকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে গোয়েন্দা পুলিশের দল।