নিজস্ব প্রতিবেদক।। যশোরের পথে প্রান্তরে কদম ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে কবির ভাষায় আমি ফুল কদম ডালে ফুটেছি বর্ষাকালে’গীতি কবির এমন কথা এখন আর মিলছে না। ছয় ঋতুর দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে এখন আর সেই ঋতুর বৈচিত্র্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আষাঢ়-শ্রাবন মূলত এ দু’মাস বর্ষাকাল। বর্ষাকালের আরেক সৌন্দর্যের নাম হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে বাড়ির আনাচে-কানাচে কিংবা রাস্তার পাশে বড় হওয়া কদমগাছের হলুদ আর সাদার আভায় বের হওয়া কদমফুল। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা এই কদমফুলগুলো খুব সহজেই মনকাড়ে ফুল প্রেমীদের।
আবার কখনো কখনোও গ্রামের ছোট বাচ্চাদের খেলার প্রধান উপকরন হিসেবে এই কদমফুলের কোন জুড়ি নেই। এছাড়া মধু সংগ্রহ করতে ফুলে ব্যস্ততা বেড়েছে মৌ-মাছিসহ নানা রকম পতঙ্গের। মাঝে মাঝে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ছন্দ তুলছে আবার ধুয়ে মুছে অমলীন বিমোহিত সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে অবহেলিত ভাবে ফোটা কদমফুলগুলো। আমাদের বাংলাদেশ প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এবং ঋতুর বর্ষা এক অনন্য ঋতু। আর বর্ষার আগমন-কে স্বাগত জানাতে কদমফুল যেন সর্বদা প্রস্তুত। রূপসী তরুর অন্যতম রূপবতী হলো কদমফুল। কদম ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন না এমন বেরসিক মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আবার বর্ষায় প্রেমিকার মনোরঞ্জনে কদমের জুড়ি নেই। একই সাথে বর্ষার প্রকৃতি বাংলা সাহিত্যে এনে দিয়েছে স্নিগ্ধতা। বর্ষার উপহার সোনালী রঙের কদম ফুল নিয়ে রচিত হয়েছে নানা গল্প, উপন্যাস,কবিতা আর গান। মানব কল্যাণে প্রকৃতির সৃষ্টি অসংখ্য ছোট-বড় মাঝারি বৃক্ষরাজির অংশ বিশেষ কদম ফুলের জুড়ি নেই।
যশোর জেলার পথে-প্রান্তরে কদম গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে ফুলে ফুলে। এ যেন আবহমান বাংলার বর্ষা বরণের প্রাকৃতিক আয়োজন। বিভিন্ন সড়কের পাশে এখন হলুদ আর সাদায় সেজেছে সর্বত্র। বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে কদম ফুলের। গাছের শাখে শাখে সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে উঠেছে অসংখ্য কদম ফুল। অসংখ্য কদম ফুল গাছ দেখা মিলছে যেখানে সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দিচ্ছে হলুদ বর্নের অসংখ্য কদম ফুল। মাঝেমধ্যেই শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে কদম ফুল হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ ছোট ফুলগুলো কানে গুজে থাকছে।
আষাঢ়-শ্রাবণে কদম গাছ ফুলে ফুলে ভরে থাকে আর প্রকৃতিতে মৌ মৌ গন্ধ থাকে বিরতিহীন তবে সময়ের আগেই দেখা মিলছে কদম ফুলের। কদম ফুলে সৌন্দর্যে পিপাসুদের তৃপ্তি এনে দেয়। তরুণ-তরুণীরা কদম ফুল তাদের প্রিয়জন-কেও উপহার দেয়। মেয়েরা খোঁপায় বাঁধে,খেলায় মেতে উঠে শিশুরাও। মূলত শিশুরা ফুলগুলো ছিঁড়ে ভেতরে থাকা গোলা আবরণ ছোট্ট বল বানিয়ে খেলাধুলা করে। কদম ফুলের গাছ ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্রে কাজে ব্যবহার হয়। কদম গাছ কমে যাওয়ায় এখন মানুষ ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। সবাই এখন বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন ফলমূল ও ফুলের গাছ লাগাচ্ছে যার ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে কদম ফুলের গাছ।
কেশবপুর পৌরবাড়ী মালিক সমিতির সভাপতি সাংবাদিক মোঃ আশরাফুজ্জামান ও নিউজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুনা রশিদ বুলবুল বলেন, ছোট বেলায় কদমফুল নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছি, সে-সময় যত গাছ দেখেছি বর্তমানে এতো গাছ আর চোখে পড়ে না। শিমুল ফুলসহ অনেক ফুলেরই এখন বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে কিন্তু কদমফুলের গাছ রোপনে এখন পর্যন্ত সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগও গ্রহণ করা হয় না। অবহেলিত ভাবে এখানে-সেখানে প্রাকৃতিক ভাবে যা হয়। কদমফুল অন্যরকম একটা ফুল যেটি দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। আমাদের গাছটিকে রক্ষা করতে বেশি বেশি রোপন করা উচিৎ। গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত বলে জ্বালানি কাঠের জন্য রোপণ করা যেতে পারে। নরম কাঠ বলে সহজেই নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।
উক্ত বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোছা: ফাহিমা আক্তার স্বপ্না কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,কদম ফুল শুভ্রতার প্রতীক। আমাদের দেশে কদমফুল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিস্নাতক দিনে বাঙ্গালীদের মনে অন্য রকম অনূভূতি এনে দেয়। এছাড়া অনেক কবি সাহিত্যিক বর্ষার কদম ফুল নিয়ে অনেক কবিতা সাহিত্য রচনা করেছেন। কদম ফুল আসলে আমাদের দেশের প্রকৃতির বর্ষা মৌসুমে সৌন্দর্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এছাড়াও কদম গাছের কাঠ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়,এই গাছের কাঠ দিয়ে ম্যাচের কাঠিও তৈরি হয়। এটা কোনো ঔষধিগুন আছে কি না সেটা আমার জানা নাই।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তুহিন হোসেন কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আষাঢ়- শ্রাবন মূলত এ দু’মাস বর্ষাকাল। বর্ষার আগমন যখন চারপাশে,তখন তার সঙ্গী হতে গাছে গাছে দেখা মিলে আরেক অতিথির। গ্রীষ্মের প্রখরতা কমাতে যখন আম,জাম,লিচুসহ নানা ফলের ঘ্রানে মুখর চারপাশ। ঠিক তখনই আগমন ঘটে বর্ষার সঙ্গী কদম ফুলের। সরু সবুজ পাতার ডালে ডালে গোলাকার মাংসল পুষ্পাধার আর তার থেকে বের হওয়া সরু হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ কদমকে সাজিয়ে তোলে ভিন্নভাবে। একটি ফুলের মাঝে এত ভিন্নতার ছোঁয়া প্রকৃতিতে কদমকে করে তোলে আরও গ্রহনযোগ্য। কদমের মিষ্টি হাসি আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই বুঝি বর্ষা এলো। বাংলার গ্রাম ও বনে বনে বর্ষার বারিধারায় কদম ফুলের রেণু ভেসে চলে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের মিষ্টি সুবাস এছাড়া ছোটবেলায় বর্ষাকালে খেলার অন্যতম উপকরন ছিলো কদমফুল। ফুলের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। ফুলগুলো হাতে নিলে এতোই ভালো লাগে যা বলে বুঝানো যাবে না। বর্ষাকালে পথে প্রান্তরে প্রচুর পরিমাণে কদম ফুলের দেখা মিলতো যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
এবিডি.কম/শিরিন আলম