লেখক: উম্মুতি তিজান মাখদুমা পন্নী।। রসুলাল্লাহর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মো’মেনীনসহ রসুলাল্লাহর পরিবারের নারীদের জন্য অতিরিক্ত হেজাবের হুকুম ছিল। আল্লাহ তাঁদেরকে নির্দিষ্ট করে আহ্বান করে সেই হুকুম বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পর পুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, ফল যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে কুচিন্তায় পতিত হবে, তোমরা ন্যায় সঙ্গত কথা বলো। তোমরা আপন গৃহে অবস্থান করো এবং জাহেলিয়াতের যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িও না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। (সুরা আহযাব ৩৩)।
.
পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহ নবী পত্নীদের প্রসঙ্গে আরো বলেন, “তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রসুলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।” (সুরা আহযাব ৫৩)।
.
নবীর স্ত্রীগণ অন্যান্য নারীদের মত নন। কারণ তাদের স্বামী তখন সাধারণ কেউ নন, তিনি একটি মহান জাতির নেতা, তিনি একজন রসুল, তিনি সমগ্র জাতির অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। জাহেলি যুগে তাদের জন্য আলাদা কোনো বিধিনিষেধের প্রয়োজন ছিল না, তারা নিজেদের ইচ্ছেমাফিক চলাফেরা করতে পেরেছেন। কিন্তু এখন নবী পরিবারের যেমন অনেক বন্ধু হয়েছে তেমনি অনেক শত্রুরও জন্ম হয়েছে। ইতোমধ্যে বহু গোত্রের সঙ্গে বহু যুদ্ধবিগ্রহ হয়ে গেছে। তাই তোমাদের জীবনযাপন ও চলাফেরার উপরও অবশ্যই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। একটি রাষ্ট্রের শাসক পরিবারের নারীরা অবশ্যই অন্যান্য নারীদের মতো চলাফেরা করতে পারেন না।
.
এটাই হচ্ছে ঐ নির্দেশ – যে তোমরা জাহেলি যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িও না। এখানে কিন্তু বের হতে নিষেধ করা হয়নি। আল্লাহ তাঁদের স্থান নির্ধারণ করেছেন মো’মেনদের মায়ের স্থান, তাদের পুনর্বিবাহও হারাম। তাই তাদের ও মো’মেনদের উভয়েরই আত্মার পবিত্রতা রক্ষার জন্য বলা হয়েছে যেন তাদের কাছ থেকে কিছু চাইলে বাহির থেকে চায়।
.
এই আয়াতগুলোকে সকল মোমেন নারীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ সেটাই যদি ন্যায়সঙ্গত হতো তাহলে আল্লাহই তো সেভাবে সকল নারীদেরকে উদ্দেশ করে হুকুমটি নাজিল করতে পারতেন। তা তো তিনি করেননি। তিনি আলাদা আলাদা করে শ্রেণি উল্লেখ করে আয়াত নাজিল করেছেন। এই অতি বিশ্লেষণকারী আলেমদের বদৌলতে দীনের হুকুমগুলো এতটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আজ তা ইসলামের বিষয়ে নারীদেরকে বিরূপ করে তুলছে।