আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্কঃ সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের এ ঘোষণার পর এলাকা ছাড়ছেন হাজারো পর্যটক ও হিন্দু তীর্থযাত্রী।
অমরনাথ মন্দিরের উদ্দেশে আগত তীর্থযাত্রীদের ওপর জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় কাশ্মীর উপত্যকা থেকে পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ-সংক্রান্ত নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে জম্মু ও কাশ্মীর সরকার। এরপরই কাশ্মীর উপত্যকা ছাড়ছেন অমরনাথ যাত্রী ও পর্যটকরা।
ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত কাশ্মীর ছেড়েছেন মোট ছয় হাজার ১২৬ জন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৮২৯ জন উপত্যকা ছেড়েছেন ৩২টি বিমানে। বাকি ৩৮৭ যাত্রী গেছেন ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে। পাশাপাশি গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাঠানো হয়েছে ৩৫ হাজার আধাসামরিক সেনা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অমরনাথের তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী। এসব জঙ্গিকে পাকিস্তান মদদ দিচ্ছে বলে ভারত বরাবরই অভিযোগ করে আসছে। তবে এমন অভিযোগ পাকিস্তান অস্বীকার করে।
সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছিল ৪৫ দিনব্যাপী অমরনাথ তীর্থযাত্রা। হিমালয় পর্বতমালার একটি গুহার ভেতরে অমরনাথ মন্দিরে এ বছর এসেছেন প্রায় তিন লাখ পুণ্যার্থী।
কাশ্মীর সরকারের পক্ষ থেকে এসব তীর্থযাত্রীকে ‘অতিসত্বর’ এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে তীর্থযাত্রীরা ওই এলাকা ছাড়ার জন্য যানবাহন জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় সরকারের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দুই লাখ শ্রমিকসহ প্রায় ২০ হাজার হিন্দু তীর্থযাত্রী ও ভারতীয় পর্যটক ওই অঞ্চল ছাড়ছেন।
গত শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, বড়সড় হামলার ছক কষছে জঙ্গিরা। এ হামলার পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ১৮ জানিয়েছে, গত শুক্র ও শনিবার কাশ্মীর উপত্যকার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একাধিকবার হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। অমরনাথ যাত্রা রুট থেকে গতকাল শনিবার ল্যান্ডমাইন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যবহৃত টেলিস্কোপযুক্ত এম-২৪ স্নাইপার রাইফেল পায় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ছাড়া ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে কেরন সেক্টরে পাকিস্তান বর্ডার অ্যাকশন টিমের হামলা প্রতিহত করার দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এ হামলায় পাচ-সাতজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এরপরই তড়িঘড়ি করে পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের অমরনাথ এলাকা ছাড়ার জন্য সতর্কতা জারি করে রাজ্য প্রশাসন। আগামী ১৫ আগস্ট অমরনাথ যাত্রা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই এভাবে তড়িঘড়ি উপত্যকা খালি করার নির্দেশে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
এদিকে জঙ্গি হামলার সতর্কতা জারির পর থেকেই কাশ্মীর উপত্যকায় থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ লাইন পড়েছে বিভিন্ন এটিএম বুথে। পেট্রল ও ওষুধ মজুদ করে রাখছেন স্থানীয়রা। তবে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার পাশাপাশি, রাজ্যের ৩৫এ ধারা তুলে দেওয়ার ঘোষণা করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সেখানকার নেতারা। এ নিয়ে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে দেখা করেন ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিসহ একাধিক নেতা। তবে এ নিয়ে তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বলে তাঁদের জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তারপরেও থমথমে কাশ্মীর উপত্যকা।