নিজস্ব প্রতিবেদক: নরসিংদীর মনোহরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)-এর কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী। অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়া, হয়রানি, অর্থ আদায় ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত এই পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযোগকারী আবুল কাশেম মনোহরদীর চন্দনবাড়ির বাসিন্দা।
অভিযোগে বলা হয়, মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন। তিনি ইন্সপেক্টর হিসেবে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও শরীয়তপুর জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ২০২৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে মনোহরদী থানার ওসি হিসেবে কর্মরত। তাঁর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার রৌহা ইউনিয়নের আমলী কেশবপুর গ্রামে। পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ময়মনসিংহে কর্মরত অবস্থায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আটক, মামলা দেওয়া, মাদক ব্যবসা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ অর্জন করেছেন। পরে শরীয়তপুরে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তিনি “ভালো পদায়ন” পান এবং বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দমনমূলক কর্মকাণ্ড চালান।

মিথ্যা মামলা ও রাজনৈতিক হয়রানির অভিযোগ
মনোহরদীতে ওসি দুলাল আকন্দ বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে এক প¶কে আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রয় দিচ্ছেন—অভিযোগে এমন দাবি করা হয়েছে। অপর গ্রুপের নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের একটি রাস্তার সংস্কার কাজ নিয়ে এক বাদী একই বিষয়ে দুটি মামলা করেন, একটি ৬ সেপ্টেম্বর, আরেকটি ১৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনাগুলোর ১০ থেকে ১৫ দিন পর মামলা করা হয় এবং এক মামলার আসামি হিসেবে এমন একজনের নাম দেওয়া হয়, যিনি দুই বছর ধরে বিদেশে কর্মরত। অভিযোগে আরও বলা হয়, ঠিকাদার মনির নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় অর্থদাতা এবং সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুনের ঘনিষ্ঠ। ২০২৪ সালের তথাকথিত নির্বাচনে তিনি পুরো মনোহরদী উপজেলার নির্বাচনী ব্যয় বহন করেন।
অর্থ আদায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
অভিযোগে বলা হয়েছে, মনোহরদীর বিভিন্ন গরুর হাট, বাজার, সিএনজি স্ট্যান্ড ও বাস কাউন্টার থেকে নিয়মিত মাসিক চাঁদা তোলা হয়। এসব থেকে সংগৃহীত অর্থের একটি অংশ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে তিনি আদায় করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া চালাকচর ইউনিয়নের কৃষক দলনেতা হিরনকে মাদক মামলায় মিথ্যা অভিযুক্ত করে থানায় এনে আটক করা হয়। স্থানীয়দের সাক্ষ্যে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে কিছুই উদ্ধার করা হয়নি।
ভুক্তভোগীর আবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ওসি দুলাল আকন্দ মনোহরদীতে এক ধরনের “অভয় আশ্রম” গড়ে তুলেছেন। ফলে মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন না। অভিযোগকারী আইজিপির কাছে আবেদন করেছেন, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ বিষয় মনোহরদীতে ওসি দুলাল আকন্দের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নামে অভিযোগ হলে তদন্ত হবে, এই বলে তিনি মোবাইল কেটে দেন।