আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক।। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা ও অবিলম্বে সংস্কার দরকার বলে জানিয়েছেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বেসরকারি গণমাধ্যম উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমষ্টি’ আয়োজিত সাংবাদিকতা ও নীতি-কাঠামো: প্রবণতা ও সুপারিশ’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্ব সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান,অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান,অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহামন কার্জন এবং বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাসহ বিশষ্টি সাংবাদিকরা। গবেষণা প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন সমষ্টির গবেষণা পরিচালক রেজাউল হক স্বাগত বক্তৃতা করেন সংগঠনের পরিচালক সাংবাদিক মীর মাসরুর জামান ও মীর সাহিদুল আলম।
হাসানুল হক ইনু বলেন,ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের জন্য নয়। যেকোনো সাধারণ নাগরিকের জন্য আইন। এই আইনে দেশের সাধারণ মানুষও গ্রেপ্তার হয়েছে। আইনমন্ত্রী নিজেও বলেছেন কোনো সাংবাদিকের ওপর এই আইনে মামলা হলে আগে তদন্ত করে দেখবে পরে গ্রেপ্তার করব। এখন যদি আমি বলি তাহলে দেশের সাধারণ নাগরিকরা কি রাস্তা থেকে ভেসে এসেছেন। তারা দেশের সম্মানিত ভোটার। তাহলে সবার ক্ষেত্রে এই আইন এক কেন হবে না? কেন বৈষম্যমূলক হবে?’
সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তার জন্য আইন। ডিজিটাল আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেক ত্রুতি বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। এখন এর পর্যালোচনা করে যেখানে ত্রুতি বিচ্যুতি রয়েছে সেটা সংশোধন করতে হবে। একই অপরাধে অন্য আইনে সাজা তিন বছর আর ডিজিটাল আইনে সাজা পাঁচ বছর। অন্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল আইনের পর্যালোচনা ও সংস্কার করা দরকার। আইনটি সংস্কার করতে এত সময় তো লাগে না।
দ্রুত কাজ করে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সরকারকে আপনারা প্রশ্নবদ্ধি করছেন। আমি মনে করি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে সংস্কার করেন, হালনাগাদ করেন ও আধুনিক করেন।’ সমষ্টির গবেষণায়, সাংবাদিকতার উন্নয়নগত দিক, প্রভাবক উপাদান এবং নীতি-কাঠামোর প্রবণতাগুলো তুলে ধরা হয়। দলীয় আলোচনা, মতামত জরিপ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশে্লষণের মাধ্যমে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়,জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৬১ জন সাংবাদিকের ৭৯ শতাংশ মনে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
উত্তরদাতা সাংবাদিকদের ৯৪ শতাংশ সাংবাদিক আইনটি সংস্কার অথবা রহিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁদের ৬৫ শতাংশ মনে করেন আইনটিকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তথ্য ও মতামত প্রকাশ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য নেতিবাচক উপাদানগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনমাফিক সংস্কার করা প্রয়োজন, অন্যদিকে ২৯ শতাংশ সাংবাদিক আইনটি সম্পূর্ণ বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে ২৫০টি মামলার তথ্যে দেখা যায়, মাত্র ১৮ শতাংশ মামলায় সাইবার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি ৮২ শতাংশ মামলায় অনলাইন মাধ্যম বা সংবাদপত্রে তথ্য বা মতামত প্রকাশের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তথ্য ও মতামত প্রকাশ সংক্রান্ত মামলাগুলোতে বেশি অভিযোগ আনা হয়েছে ২৫ ধারায় (৪৮ শতাংশ)। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ২৮ ও ২৯ ধারা (যথাক্রমে ১৭.৩১ শতাংশ ও ১২.১৮ শতাংশ)।
এ ছাড়া বহুল ব্যবহৃত অন্য দুটি ধারাগুলো হচ্ছে ২৯ ও ৩১। রাজনীতিক বা রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের নেতারা ৪৬ শতাংশ মামলা করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ২৩ শতাংশ মামলায় বাদী হয়েছেন। অন্যান্য বাদী ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী যেমন, সাংবাদিক, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিল্পী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, বেসরকারি চাকরিজীবী, ধর্মীয় নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও বিচারক। মামলাগুলোতে ২০ জন নারীসহ অন্তত ৫৫৪ জনকে আসামি করা হয়। ১৫৩টি মামলায় প্রধান আসামিসহ একাধিক আসামিকে মামলার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার বিবাদীদের মধ্যে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি ৩৬ শতাংশ, সাংবাদিক ২৯ শতাংশ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ১৪ শতাংশ। বাকিরা ছিলেন বেসরকারি চাকুরে, ধর্মীয় নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্পী, আইনজীবী, সরকারি কর্মচারী। অর্থাৎ মোট মামলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মামলায় সাংবাদিকরা অভিযুক্ত হয়েছেন।
আমাদেরবাংলাদেশ.কম/রাজু