নিজস্ব সংবাদদাতা।। সাভারে কিশোর গ্যাং সদস্যদের কথামতো না চলায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাংবাদিক পুত্রসহ দুই শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৮ মার্চ) ভোররাতে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঘটনায় সাংবাদিক মতিউর রহমান বাদি হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সাভার পৌরসভার ডগরমোড়া এলাকার মো: মোস্তফার ছেলে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘ভাই-ব্রাদার গ্রুপের’প্রধান মো: লতিফ ওরফে লেট লতিফ (১৯),শাহীবাগ চৌরাস্তা এলাকার ইয়াসিন খানের ছেলে গ্রুপের সক্রিয় সদস্য আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহান খান (১৬),চাপাইন-সিআরপি এলাকার মো: মাসুদ প্রধানের ছেলে মোঃ ছাদিক হাসান মুনতাসির (১৫),শাহীবাগ এলাকার মো: আব্দুল্লাহর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (১৯)। তারা ভাই-ব্রাদার নামীয় কিশোর গ্যাং গ্রুপ গঠন করে এলাকায় নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে কিশোর গ্যাং গ্রুপের হামলার শিকার দুই শিক্ষার্থী জিসান প্রামানিক ও সিয়াম রাজা-কে মুমুর্ষ অবস্থায় সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাত ৮ টার দিকে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতি ও সুইচ গিয়ার দিয়ে কুপিয়ে এবং লোহার রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাথারিভাবে পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় হামলাকারী।
আহত জিসান প্রামানিক দৈনিক যুগান্তরের সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক মতিউর রহমান ভান্ডারীর ছেলে এবং সিয়াম রাজা সাভার সদর ইউনিয়নের কলমা এলাকার কামরুল হোসেনের ছেলে। এদের মধ্যে জিসান প্রামাণিক বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং সিয়াম রাজা কলমা ওয়াজ আলী মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়,’ভাই-ব্রাদার’নামক কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান মোঃ লতিফ ওরফে লেট লতিফ স্কুল শিক্ষার্থী জিসান প্রামানিককে তার অনুসারী হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু বখাটে লতিফের কথা না শুনায় চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বিপিএটিসি স্কুল কতৃক আয়োজিত বার্ষিক বনভোজনের সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। সেই ঘটনাকের কেন্দ্র করে রবিবার রাতে কৌশলে জিসান প্রামানিককে সাভারের রেডিও কলোনী এলাকায় ডেকে এনে কিশোর গ্যাং লিডার লতিফের নেতৃত্বে জিসানসহ দুইজনকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা।
উক্ত ঘটনায় বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে সিয়াম রাজাও গ্যাং প্রধান লেট লতিফের দ্বারা ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়। আহত জিসানের বাবা সাংবাদিক মতিউর রহমান বলেন, প্রায় এক মাস আগে গাজীপুরের সাফারি পার্কে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বনভোজনে গিয়েছিলো বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেসময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে বাসে ওঠা নিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। পরে উপস্থিত শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সাময়িকভাবে মিমাংসা করা হয়।
বিষয়টি জানার পর আমি বিপিএটিসি স্কুল কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে যাতে পরবর্তীতে আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় আজকে আমার ছেলেকে উপুর্যপুরি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে কিশোর গ্যাং লিডার লতিফ। আমি এঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছি। ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি তাদেরকে স্কুল থেকে বহিস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
উক্ত বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবার আলী খানের কাছে জানতে চাইলে আমাদেরবাংলাদেশ ডটকম-কে তিনি বলেন,কিশোর গ্যাং গ্রুপের হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এঘটনায় মূল হোতাসহ ৪ জন-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন-কে দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে আরও যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের সবাই-কে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এবিডি.কম/রাজু